জুলাই আহত পরিবারগুলোর মাঝে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা: এক ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্যোগ
মোঃ সাকির হাওলাদার
জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী), ৭ জুন ২০২৫:
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক আন্দোলনে রক্তাক্ত হয় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা। সে সময়কার হৃদয়বিদারক ঘটনায় নিহত হন তরুণ হৃদয় তরুয়া এবং গুরুতর আহত হন আরও ২১ জন। আজও যারা সেই যন্ত্রণার দাগ বয়ে বেড়াচ্ছেন—তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য নজির স্থাপন করলো প্রশাসন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (৭ জুন) ঈদের নামাজ শেষে, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে এই সহায়তা পৌঁছে দেন তাঁদের ঘরে ঘরে।
উপজেলা প্রশাসনের এই মানবিক উদ্যোগে নিহত হৃদয় তরুয়ার শোকাহত পরিবারসহ অন্যান্য আহতদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় নগদ অর্থ, খাদ্যসামগ্রী, নতুন পোশাক ও প্রয়োজনীয় ঈদ উপকরণ। ইউএনও মোঃ তরিকুল ইসলাম প্রতিটি পরিবারে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেন, শিশুদের সান্ত্বনা দেন এবং অসুস্থদের পাশে কিছু সময় নীরবে বসে থাকেন—যা উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়।
ইউএনও জানান,
“নিহত হৃদয় তরুয়া এখন শুধুই স্মৃতি। আর যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের কেউ গুলিতে পা হারিয়ে চলাফেরায় অক্ষম, কেউ চোখ হারিয়ে দৃষ্টি হারিয়েছেন, আবার কেউ মাথায় গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আজও শয্যাশায়ী। অনেকেই জীবনযুদ্ধে হেরে না গিয়ে রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরি করে নিজের সম্মান রক্ষা করছেন। তাঁদের এই সাহস ও সংগ্রাম আমাদের অনুপ্রেরণা।”
এই আর্থিক সহায়তা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি ছিল এক আত্মিক দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। পরিবারগুলোর অনেকেই জানান, এটি ছিল তাঁদের জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা—যেখানে সরকারি প্রতিনিধি নিজে এসে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যাঁরা এই মুহূর্তে মির্জাগঞ্জে অবস্থান করছেন না, কিংবা শহরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন—তাঁদের কাছে ডাকযোগে কিংবা বিকাশের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে যাতে ঈদের দিনে কেউ একাকীত্ব ও অসহায়তার অনুভূতিতে না ভোগেন।
হৃদয় তরুয়ার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“ছেলে তো ফিরে আসবে না, কিন্তু ঈদের দিনে যে কেউ তার কথা মনে রেখেছে, সেটাই অনেক বড় শান্তি।”
এক আহত যুবক, যিনি এখনও বাঁ পায়ে গুলির যন্ত্রণায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না, বলেন,
“এই উপহার শুধু জিনিস না, এটা প্রমাণ করে আমরা ভুলে যাইনি।”
মির্জাগঞ্জের এই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঈদের এই সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ যেন প্রমাণ করলো—রাষ্ট্র যদি চায়, মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে। প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগ কেবল ঈদের আনন্দ নয়, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।