ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা যেন অভিশাপ!
১৫০ টাকার ভাড়া এখন ৭০০ টাকা, তাও নেই গাড়ি!
স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ মানিক
ঈদ—আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় আনন্দের দিনগুলোর একটি। কিন্তু এই আনন্দের যাত্রা যেন সাধারণ মানুষের জন্য পরিণত হয়েছে এক দুঃস্বপ্নে। বিশেষ করে যারা ঢাকাসহ শহরাঞ্চল থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান, তাদের দুর্ভোগ এখন সীমাহীন।
গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ—এই রুটে স্বাভাবিক সময়ে বাসভাড়া যেখানে ১৫০ টাকা, ঈদের সময় সেই ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়! তাও যথাসময়ে গাড়ি পাওয়া যেন সোনার হরিণ। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না টিকিট, বাসে উঠার সুযোগ নেই বললেই চলে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন ট্রাকের ছাদে, মালবাহী ভ্যানে কিংবা রিকশায়। কেউ কেউ হাঁটছেন মাইলের পর মাইল—শুধু বাড়ি ফেরার তাগিদে।
রাস্তা জুড়ে চলছে ভয়াবহ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো যাত্রার নিশ্চয়তা নেই। এই দুর্ভোগে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্করা। এক নারী যাত্রী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বাচ্চাটা অসুস্থ, তবু বাড়ি তো ফিরতেই হবে… ঈদের দিনটা যে মা-বাবার সঙ্গে কাটাবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।”
যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন। ভাড়া নির্ধারণে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, “ভাড়া তো একরকম ডাকাতি! তবু কী করব, বাড়ি তো ফিরতেই হবে।” অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের তদারকি কার্যত অদৃশ্য। সবার চোখের সামনেই চলছে এই চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
একজন অভিজ্ঞ বাসচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ঈদের সময় পুলিশ, পরিবহন নেতারা—সবাইকে দিতে হয় ভাগ। তাই বাধ্য হয়েই বাড়ানো হয় ভাড়া।” এতে বোঝা যায়, সমস্যাটা শুধু ভাড়ায় নয়—পুরো পরিবহন ব্যবস্থায়ই এক ধরণের অরাজকতা বিরাজ করছে।
জনসাধারণের একটাই দাবি—যাত্রীদের নিরাপদ, সুষ্ঠু ও ন্যায্য ভাড়ায় যাতায়াত নিশ্চিত করুক প্রশাসন। ভাড়া নির্ধারণে হোক কঠোর তদারকি এবং অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
না হলে ঈদের আনন্দ ধরা দেবে না, শুধু থাকবে দীর্ঘশ্বাস আর ভোগান্তির গল্প।