ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আটক আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রেজাউল কবির
আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, বাগেরহাট
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে আটক হয়েছেন বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রেজাউল কবির।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেল ৪টার দিকে তিনি বেনাপোল চেকপোস্টে পৌঁছে পাসপোর্ট (নম্বর: A00953915) ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। সেই সময় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে থাকা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই শেষে তাকে আটক করেন। শেখ রেজাউল কবির বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার চাদেরহাট গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনি মৃত মুকবুল শেখের পুত্র।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন মুন্সি জানান,
“আমরা গোপন সূত্রে আগেই জানতে পেরেছিলাম যে, শেখ রেজাউল কবির ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। সেই অনুসারে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সকল কর্মকর্তাকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়। তিনি যখন ইমিগ্রেশনে আসেন ও পাসপোর্ট জমা দেন, তখন যাচাই করে দেখা যায়, তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রাথমিক যাচাইয়ের পরপরই তাকে আটক করা হয়।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ রেজাউল কবিরের বিরুদ্ধে বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার (নম্বর ২১, তারিখ ২২/০৯/২০২৪) বিভিন্ন গুরুতর ধারায় অভিযোগ রয়েছে। মামলার ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১৪৩ (অবৈধ সমাবেশ), ৩৪১ (অবৈধভাবে গতিরোধ), ৩৪২ (অবৈধভাবে আটক), ৩২৩ (আঘাত করা), ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), ৩৮৬ (চাঁদাবাজি), ৫০৬ (হুমকি), এবং ৫০২ (মিথ্যা তথ্য প্রচার) ইত্যাদি।
এই অভিযোগগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত জটিলতা এবং গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
আটকের পর শেখ রেজাউল কবিরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া বলেন,
“আসামির বিরুদ্ধে মূল মামলা যেহেতু মোল্লাহাট থানায় হয়েছে, তাই প্রক্রিয়া অনুসারে তাকে সেখানে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত তাকে মোল্লাহাট থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে, এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
একজন জনপ্রতিনিধি ও দলীয় সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির এমন ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মোল্লাহাট উপজেলাসহ গোটা বাগেরহাট জুড়েই এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, একজন চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতা কীভাবে এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন এবং কেন তিনি পালিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নিলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শেখ রেজাউল কবিরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ থাকতে পারে, যা তদন্তে বের হয়ে আসবে। বর্তমানে তাকে গ্রেপ্তারের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া ও আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।