রাজশাহীতে প্রতারণা করে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগে মামলা, তদন্তে পিবিআই
মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীতে প্রতারণার মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এক সরকারি কর্মকর্তা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযোগটি নিয়ে ইতোমধ্যেই আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজশাহী নগরীর পরিচিত আবাসন প্রতিষ্ঠান ‘গ্রীণ প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার প্রধান অভিযুক্ত হলেন, নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন এবং তার স্বামী প্রকৌশলী কাজীমুল হক।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ‘গ্রীন মনোয়ারা প্যালেস’ নামের সাততলা ভবনের তৃতীয় তলার (বি-২) ফ্ল্যাটটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কেনার চুক্তি করেন অভিযুক্ত দম্পতি। রেজিস্ট্রেশনের দিন নির্ধারণ হয় ২৬ জানুয়ারি। কিন্তু দলিল প্রস্তুতের সময় তারা মাত্র ২৭ লাখ টাকা দলিলমূল্য উল্লেখ করে দলিল তৈরি করান। বাদীর দাবি, এটাই ছিল প্রতারণার সূচনা।
বাদী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রির দিন নগদ ১৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ব্যাংক ট্রান্সফারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও বিকাশে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে মোট ২০ লাখ টাকা দেন অভিযুক্তরা। একই দিন ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি চেকও দেন, বাকী টাকা তাৎক্ষণিক ব্যাংক হিসেবেই জমা দেবেন বলেও জানান। কিন্তু এরপর আর কোনো অর্থ জমা হয়নি।
পরবর্তীতে যোগাযোগ করলেও তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। দুই দফায় ২ ফেব্রুয়ারি ও ২৮ মার্চ আরও ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেন। তারপর থেকে তারা যোগাযোগ এড়িয়ে যেতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে দাবি করা বাকি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি টাকা চাইলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ।
বাদী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রকৌশলী কাজীমুল হকের মোবাইলে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই তিনি “রং নাম্বার” বলে ফোন কেটে দেন। অপরদিকে, কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি, পরবর্তীতে কল কেটে দেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই দম্পতি পরিকল্পিতভাবে প্রতারণা করেছেন। সরকারি বিধি ভেঙে নিজেদের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছেন। এমনকি টাকা চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তাই বাধ্য হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি।”
আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে রাজশাহীতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি একটি নজিরবিহীন প্রতারণার মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।