পবিত্র হজ আজ, ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা প্রান্তর

আবিদ হাসান আব্দুল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার

আজ সৌদি আরবের আরাফার ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ—পবিত্র হজ। হিজরি ১৪৪৬ সনের হজ পালনের অংশ হিসেবে আজ ৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার, মুসলিম হজযাত্রীরা হজের অন্যতম প্রধান রোকন ‘ওকুফে আরাফা’ পালনের জন্য আরাফায় অবস্থান করছেন।

হজের মূল পর্ব শুরু

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মাধ্যমে। হজযাত্রীরা বুধবার রাতে মিনায় রাত যাপন করেন এবং ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের পর কাফেলার মতো রওয়ানা হন পবিত্র আরাফার ময়দানের দিকে। মিনার পূর্ব দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশাল সমতল ভূমি আরাফা, যেখানে হাজিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেন। এখানেই তারা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া, ইস্তেগফার ও জিকির-আজকারে সময় কাটান।

আরাফার ময়দানে ইতিহাস ও মাহাত্ম্য

আরাফার ময়দান শুধু হজের একটি স্তম্ভ নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এখানেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিদায় হজে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেন। এই খুতবায় মানবাধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, বংশীয় অহংকার বর্জনের আহ্বান এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার মৌলিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

আজ হাজিরা মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা শুনবেন। এরপর তারা যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন কসর ও জম’ পদ্ধতিতে।

মুজদালিফায় রাত যাপন

সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফা ত্যাগ করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানে তারা রাত যাপন করবেন খোলা আকাশের নিচে। মুজদালিফায় তারা মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জন্য ছোট ছোট কঙ্কর সংগ্রহ করবেন।

বিশাল প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এ বছর বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রী হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ। হজ মৌসুমে তাপপ্রবাহের প্রেক্ষিতে সৌদি সরকার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করেছে। পাশাপাশি, ৪০টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা একযোগে কাজ করছে হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে।

বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে—

• ৫০ হাজার বর্গমিটার ছায়াযুক্ত এলাকা
• ৪০০টিরও বেশি শীতলীকরণ ইউনিট
• হাজার হাজার চিকিৎসা কর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স

হজের পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিকতা

হজের প্রথম দিনে পুরুষ হজযাত্রীরা সাদা দুই টুকরো কাপড়ের ইহরাম পরে ইহরামের অবস্থায় প্রবেশ করেন। নারীরা পরিধান করেন শালীন পোশাক ও মাথা ঢেকে ফেলেন। এরপর তারা মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার হাঁটার মাধ্যমে সাঈ সম্পন্ন করেন।

পরবর্তী ধাপে তারা মিনা গিয়ে তাঁবুর শহরে অবস্থান করেন, যেখানে ইসলামী ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অংশ হিসেবে একটি রাত কাটানো হয়। এরপর আজ তারা আরাফায় এসে হজের মূল রোকন সম্পন্ন করছেন।

অতীতের হজ পরিসংখ্যান

২০২৪ সালে (১৪৪৫ হিজরি) হজে অংশ নিয়েছিলেন মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন, যাদের মধ্যে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রী ছিলেন প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার। সেই বছরও ২০০টিরও বেশি দেশের মুসলমান অংশ নিয়েছিলেন এই পবিত্র আনুষ্ঠানিকতায়।

বিশ্ব মুসলিমের একত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক হজ আজ এক অনন্য ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে পালিত হচ্ছে আরাফার পবিত্র প্রান্তরে। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত সেই ভূমি আজ পরিণত হয়েছে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনায় মগ্ন কোটি হৃদয়ের মিলনমেলায়।