নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার গড়িমসি কেন: রিজভী
স্টাফ রিপোর্টার, হারুন অর রশিদ
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তার অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী সংস্কারে কার্যকর কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছে না। বরং সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি করা হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরায় বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে এক ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিম্ন আয়ের কয়েক শতাধিক মানুষের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়, যা অর্থায়ন করে একটি বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী।
রিজভী বলেন, “এই দেশের জনগণ বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে যে ভোটাধিকার অর্জন করেছিল, সেটিকে একনায়কতন্ত্রের থাবায় ধ্বংস করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। ভোটাধিকার যেন কেবল একটি ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে, জাদুঘরে তুলে রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী ছিলাম, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ও জোরালো পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবে আমরা উল্টো চিত্র দেখছি। এক বছর পূর্ণ হতে চললেও, নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি, বরং চলছে গড়িমসি ও দোদুল্যমানতা।”
রিজভীর অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশন সংস্কার, প্রশাসন পুনর্গঠন, ভোটার তালিকার নিরপেক্ষ হালনাগাদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরিতে কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। অথচ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে চলেছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সময় খুবই অল্প। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য এখনই প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এই সংস্কার শুধু সময়ের দাবি নয়, এটি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত।”
রিজভী আরও বলেন, “যদি ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তবে দেশে স্থায়ী রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। এবং তার দায় সম্পূর্ণভাবে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনকে নিতে হবে।”
বিএনপি নেতা রিজভী প্রশ্ন তোলেন, “ড. ইউনূস কী শুধু একজন তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা, নাকি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে—সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি নীরব, ধীর এবং সিদ্ধান্তহীন। এ ধরনের আচরণ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।”
উত্তরার এই ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রিজভী বলেন, “এই তীব্র মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সাধারণ মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ তো দূরের কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছে। তাই বিএনপি এবং আমাদের সহানুভূতিশীল উদ্যোক্তারা মিলে সামান্য কিছু সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।”