গরু চুরির অভিযোগে হাতেনাতে ধরা বিএনপি নেতা, দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও বিব্রতকর পরিস্থিতি
আজীজুল রহমান, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার, বাগেরহাট
বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গরু চুরির অভিযোগে বিএনপির এক স্থানীয় নেতা হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি শেখ মোঃ গোলাম রসূল (৩৭), পিতা শেখ আব্দুল আজিজ, বানতলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির একজন সক্রিয় ও পরিচিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত গভীর রাতে একটি গরু চুরি করে পালানোর চেষ্টা করছিলেন শেখ গোলাম রসূল। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা তাকে ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে তাকে চোরাই গরুসহ ধরে ফেলেন। পরে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘটনাটি খুব দ্রুত পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরপরই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ, হতাশা ও লজ্জার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর অনেক ত্যাগী নেতা ও কর্মী প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন:
“পুলিশের লাঠিপেটা, জেল-জুলুম, হামলা-মামলার সব কিছু আমরা সহ্য করেছি দলের জন্য। অথচ আজ শুনতে হচ্ছে—আমরা গরু চোর দলের সদস্য! এটা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো দলের সম্মান ও ভাবমূর্তির জন্য লজ্জাজনক।”
অনেকেই বলছেন, এমন ঘটনায় দলের আদর্শ, শৃঙ্খলা ও নীতির প্রতি জনমনে প্রশ্ন উঠছে। সাধারণ কর্মীদের মধ্যে বিরক্তি ও হতাশা বাড়ছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, দলে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে অতীতেও এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারা বলছেন, দলের নামে অসৎ কর্মকাণ্ড করে কেউ পার পেয়ে গেলে সেটি পুরো সংগঠনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
একাধিক নেতা ও কর্মী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোন রকম আপস করা যাবে না।
জেলা বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন:
“আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে। বিএনপি কখনোই অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না।”
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
এ ঘটনাটি স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জনগণের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এখনই কঠোর অবস্থান গ্রহণ জরুরি।
সাধারণ কর্মীদের কাছেও প্রশ্ন উঠেছে—“এই ধরনের অপরাধী কীভাবে দলে প্রবেশ করে এবং টিকে থাকে?”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে। তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তির অপরাধ নয়, এটি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, সদস্য নির্বাচনের মানদণ্ড এবং আদর্শিক প্রতিশ্রুতির উপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে সকল পর্যায় থেকে।