তজুমদ্দিনে মহিলা দলের সভানেত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন — অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও ইউপি দফাদার
স্টাফ রিপোর্টার:
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে ভিজিএফ’র চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্য মালেকা বেগমকে প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হাওলাদার ও ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১ জুন (রবিবার) সকাল ৯টায় চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। মালেকা বেগম জানান, তিনি ইউনিয়ন মহিলা দলের সভানেত্রী হিসেবে ৯টি ওয়ার্ডের দরিদ্র নারীদের জন্য ভিজিএফ’র আওতায় ১০ কেজি করে চাল সংগ্রহে কাজ করছিলেন। এজন্য গত শনিবার তিনি চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিয়াজের কাছে একশো জনের জন্য ভিজিএফ স্লিপের আবেদন করেন। তখন রিয়াজ তাকে চল্লিশজনের তালিকা দিতে বলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়।
রবিবার সকালে তিনি পুনরায় নামের তালিকা জমা দিতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানে উপস্থিত দফাদার আলাউদ্দিন, বিএনপি নেতা ইব্রাহিম হাওলাদার ও তাদের মহিলা সমর্থকরা তাকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে তারা মালেকা বেগমের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে পাশবিক নির্যাতন চালায়। তার মাথা, পিঠ ও মুখমণ্ডলে বেধড়ক কিল-ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে দফাদার আলাউদ্দিন দাবি করেন, মালেকা বেগম ভিজিএফ’র চাল নিতে আসা নারীদের স্লিপ ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলে উপস্থিত নারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। তিনি এই নির্যাতনের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ইব্রাহিম হাওলাদারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, “ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টার দিকে, তবে আমি অফিসে পৌঁছেছি সাড়ে ১০টায়। আমি পরে বিষয়টি শুনেই আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহব্বত খান জানান, “মালেকা বেগম ঘটনাটি থানায় এসে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নারী নেত্রীর ওপর এমন বর্বরোচিত হামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলেও অনেকেই মনে করছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ।