বাঘায় ১৪ হাজারের বেশি অসহায় পরিবার পেল ঈদের উপহার

মো: গোলাম কিবরিয়া | রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অসহায় ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মাঝে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে সরকার পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ (Vulnerable Group Feeding) চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের মোট ১৪ হাজার ১৩০টি পরিবার পেয়েছে ১০ কেজি করে বিনামূল্যের চাল।

চাল বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল থেকে চাল বিতরণ কার্যক্রমের সূচনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও বাঘা পৌরসভার প্রশাসক শাম্মী আক্তার। প্রথম দিনে বাঘা পৌরসভার ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরদিন ৬ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

চাল বিতরণ কার্যক্রমে ইউএনওর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন:

• সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম
• উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকুল হোসেন
• অফিস সহকারী আকরাম হোসেন
• প্রকল্প প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান

ইউনিয়ন ও পৌরসভার বরাদ্দ তালিকা

প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাল বরাদ্দ পাওয়া পরিবারের সংখ্যা নিম্নরূপ:

• বাঘা পৌরসভা: ৪,৬২১ জন
• আড়ানি পৌরসভা: ৩,০৮১ জন
• বাজুবাঘা ইউনিয়ন: ৬৬৩ জন
• গড়গড়ি ইউনিয়ন: ৮২০ জন
• পাকুড়িয়া ইউনিয়ন: ১,০১৬ জন
• মনিগ্রাম ইউনিয়ন: ১,৪৮২ জন
• বাউসা ইউনিয়ন: ১,৪২৫ জন
• আড়ানি ইউনিয়ন: ৫২২ জন
• চকরাজাপুর ইউনিয়ন: ৫০০ জন

মাঠপর্যায়ে বাস্তবচিত্র

পৌরসভা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে চাল বিতরণ কার্যক্রম ঘুরে দেখা গেছে, উপকারভোগীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চাল নিচ্ছেন। কয়েকজন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া স্লিপে চাল পেয়েছেন। তাদেরই একজন দক্ষিণ মিলিক বাঘা গ্রামের হাজেরা বেওয়া, যিনি জানান, “চাল পেয়েছি, কিন্তু মান তেমন ভালো না।”

পর্যবেক্ষণ ও তদারকি

প্রকল্প কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, “৩ জুন থেকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। আড়ানি ও বাউসা ইউনিয়ন বাদে সকল জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকরা চাল বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।”

বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহমান জানান, “আমাদের ইউনিয়নে মঙ্গলবার ও বুধবার—এই দুই দিন চাল বিতরণ করা হবে।”

উপকারভোগীদের কণ্ঠে স্বস্তির প্রতিধ্বনি

চাল পাওয়া বেশিরভাগ অসহায় পরিবার জানান, ঈদকে সামনে রেখে এই খাদ্য সহায়তা তাদের অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। তবে কিছু জায়গায় চালের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অধিকাংশই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মাঝে ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও ভাগাভাগি করে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে চালের গুণগত মান, বিতরণে স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তালিকা প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে কার্যক্রমটি আরও মানবিক ও ফলপ্রসূ হতো।