বাগেরহাটের রামপালে ১৫ বছর বয়সী শিশুকে নির্যাতনের দায়ে গ্রাম পুলিশসহ ৫ জনের দুই বছর করে কারাদণ্ড
বিশেষ সংবাদদাতা:
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৫ বছর বয়সী এক শিশুকে চুরির অপবাদ দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রাম পুলিশসহ পাঁচজনকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মো. পনির শেখ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় পাঁচজন আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের মল্লিকের গ্রামের ছরোয়ার হাওলাদার, তার স্ত্রী আকলিমা বেগম, গ্রাম পুলিশ সদস্য নাসিম শখান ওরফে কালু, কেরামত হাওলাদার এবং মাহমুদ মাঝি।
মামলার নথি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জুলাই সকালে মল্লিকেরবেড় গ্রামের রাস্তা থেকে ইয়াছিন আরাফাত (১৫) নামের এক শিশুকে চুরির অপবাদ দিয়ে ধরে এনে প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হয়। তাকে রাস্তার পাশে ফেলে ঘুষি, লাথি, লাঠি ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেন গ্রাম পুলিশ নাসিম শখানসহ অভিযুক্তরা। এসময় স্থানীয় কিছু লোক নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক নিন্দার সৃষ্টি হয়।
ওই দিন বিকেলেই নির্যাতিত শিশুর বাবা অলিয়ার হাওলাদার বাদী হয়ে রামপাল থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। তদন্ত শেষে রামপাল থানা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
মামলার শুনানিতে বাদীপক্ষের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করা হয়। এসব তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনা করে বিচারক মো. পনির শেখ প্রতিটি আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।
এ মামলার আইনি সহায়তা ও প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারকে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'বাদাবন'। সংস্থাটির প্যানেল আইনজীবী মোসা. মেহেরুন্নেছা বলেন, “১৫ বছর বয়সী একটি শিশুকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির।
রায়ের পর মল্লিকেরবেড় গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ পায়। অনেকেই বলেন, এমন বিচার সমাজে আইন ও ন্যায়ের প্রতি আস্থার প্রতীক। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “শিশুটির উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। আজ বিচার হওয়ায় আমরা খুশি।”