নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে নগদের দুর্নীতির সংবাদে এনসিপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
হারুন অর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন বলে নিন্দা জানিয়েছে এনসিপি।
এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি বলেছে, ‘নাহিদ ইসলামের নাম ব্যবহার করে নগদকে ঘিরে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে কিছু সংবাদমাধ্যম, তা পুরোপুরি মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিকে কালিমালিপ্ত করার একটি অপচেষ্টা।’
এনসিপি-র দাবি, প্রকাশিত প্রতিবেদনে যাকে নাহিদ ইসলামের ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, সেই আতিক মোর্শেদ আসলে বর্তমানে এনসিপি প্রধান উপদেষ্টা ফাইজ তাইয়্যেব আহমেদের বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত। নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা থাকাকালীন আতিক তার সঙ্গে কাজ করলেও বর্তমানে তার কোনো প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নাহিদ ইসলাম যখন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময় নগদ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। সেই সময়ে কোনো অনিয়ম বা লেনদেন বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণের সুযোগ নেই। এনসিপির ভাষ্য, “এই ধরনের রিপোর্ট মূলত রাজনৈতিক আক্রমণের হাতিয়ার। গণতান্ত্রিক শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা মাত্র।”
দলটি আরও অভিযোগ করেছে, এই তথাকথিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি রেডিমেড রিপোর্টকে ভিত্তি করে তৈরি, যা সাংবাদিকতার ন্যূনতম মানদণ্ডকেও অতিক্রম করে না। এনসিপি বলেছে, “ওয়ান-ইলেভেন আমলে যেমনভাবে চিহ্নিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ফরমায়েশি রিপোর্ট’ তৈরি করা হতো, এই ধারাবাহিকতা আবার ফিরে এসেছে। এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সংকেত।”
নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মিডিয়া সেল থেকে ‘ফটোকার্ড’সহ নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণা চালানো হয়, যার নেপথ্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক বিদ্বেষ রয়েছে বলে দাবি এনসিপির। দলটির মতে, “এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সংঘাতময় করে তুলছে।”
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এনসিপি। তাদের দাবি, “গণঅভ্যুত্থানের পরও দেশের গণমাধ্যম কাঠামোগতভাবে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। মালিকানা ও নেতৃত্ব বদলালেও মানসিকতায় এখনো পুরনো ফ্যাসিবাদী প্রভাব স্পষ্ট। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা, অলিগার্ক নিয়ন্ত্রিত মালিকানার আধিপত্য এবং সাংবাদিকতার নামে রাষ্ট্রীয় মদতে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।”
এনসিপি বলেছে, “আমরা আশা করেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে গঠনমূলক সমালোচনা, যুক্তিনির্ভর প্রতিবেদন এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আবহ তৈরি হবে। কিন্তু হতাশার সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি। এখনই সময় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের।”
দলটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে যারা আবারও এক-এগারোর মতো রাজনৈতিক দমন-পীড়নের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতর থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”