হাইকোর্টের রায় বাতিল, বৈধ হলো জামায়াতের নিবন্ধন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া ঐতিহাসিক রায় বাতিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
দলটির পক্ষে করা আপিল গ্রহণ করে আদালত জানান, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া জামায়াতের নিবন্ধন এখন থেকে বৈধ বলে গণ্য হবে। আদালতের এই রায়ের ফলে দলটি আবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনি সুযোগ ফিরে পেল।
এই মামলার শুনানি দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আপিল বিভাগ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল। তবে পরে আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন জানালে ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে।
পরবর্তী সময়ে ৩ ডিসেম্বর শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ শুনানি। চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে আজকের দিন রায়ের জন্য ধার্য করা হয়েছিল। জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি ও সম্মিলিত ইসলামী জোটসহ ২৫ জন ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
এই রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। এরপর জামায়াত দলীয় গঠনতন্ত্রে একাধিকবার সংশোধনী এনে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয়। দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’।
অবশেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে একইসঙ্গে জামায়াতকে আপিল করার অনুমতি দেন আদালত।
২০১৩ সালের নভেম্বরে জামায়াত আপিল করে। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর তা খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবারও নতুন আবেদন করা হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলেও, একই বছরের মাঝামাঝি ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসন জামায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় এবং ২৮ আগস্ট পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
এরপরই জামায়াত নিবন্ধন মামলার শুনানি পুনরায় শুরু করার আবেদন জানায়, যা শেষ পর্যন্ত আজ আপিল বিভাগে তাদের পক্ষে রায় আকারে গৃহীত হয়।
রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবীরা জানান, এই রায়ের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। তারা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন এখন থেকে সম্পূর্ণ বৈধ এবং দলটি নির্বাচনসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।