মোহাম্মদপুরে এনসিপি’র নাহিদ ইসলাম: “আমরা ক্ষমতার নয়, জনতার রাজনীতি করি”
– বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা, ৩০ মে:
রাজনীতি যেন আর দখলদার ও চাঁদাবাজদের খেলায় পরিণত না হয়—এই প্রত্যয়ে জনতার কাছে হক ও ইনসাফভিত্তিক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার দিনভর মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন তিনি তার রাজনৈতিক বার্তা।
দিনভর কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন পথসভা, শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা গড়ে তোলেন। জেনেভা ক্যাম্প, সূচনা কমিউনিটি সেন্টার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, তিন রাস্তা মোড়, ধানমন্ডি—এসব এলাকার সরু গলি আর ভেজা রাস্তা যেন মুখর ছিল “নাহিদ ভাই এসেছে” স্লোগানে।
“চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করুন। হকের পক্ষে থাকুন। আমরা ইনসাফের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা জনতার রাজনীতি করতে এসেছি, ক্ষমতার নয়,” — এক পথসভায় জনতার উদ্দেশে বলেন নাহিদ ইসলাম।
সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। একটানা বৃষ্টির মধ্যেও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করেন নাহিদ ইসলাম ও তার সহকর্মীরা। বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে তিনি বক্তব্য দেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে।
জেনেভা ক্যাম্পসংলগ্ন এক পথসভায় তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা, চোখে ছিল প্রত্যয়ের দীপ্তি।
“আপনারা যারা বৃষ্টির মধ্যেও এখানে এসেছেন, তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আগামীর বাংলাদেশ আপনাদের হাতেই গড়ে উঠবে। শহীদের মর্যাদার চেতনায় আমরা ২৪-এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করব,”—বলতে বলতে গর্জে উঠছিল তার চারপাশের কর্মী-সমর্থকরা।
“নাহিদ ভাই এগিয়ে যাবে, ক্যাম্পবাসী তোমার সাথে”—এই স্লোগানে জেনেভা ক্যাম্পের গলি-প্রবেশপথ হয়ে উঠেছিল যেন জনতার সংহতির মিছিল।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছান নাহিদ ইসলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি শোনেন অতীতের যন্ত্রণা আর বর্তমানের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন:
“এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবার সমান অধিকার থাকবে। এটা আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন থেকেই একদিন গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই চেতনার পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।”
পরে তিনি শহীদ সৈকতের কবর জিয়ারত করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে মোনাজাত করেন তিনি। এরপর তিনি তিন রাস্তা মোড়, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও ধানমন্ডি এলাকায় একাধিক পথসভা ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন।
নাহিদ ইসলামের সারা দিনের কার্যক্রমে একটি বিষয় স্পষ্ট—তিনি প্রচলিত রাজনীতির ধারা থেকে আলাদা কিছু উপহার দিতে চান। তার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে “হক”, “ইনসাফ”, “জনতার রাজনীতি”—এই শব্দগুলো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জনআস্থা কমে এসেছে, তখন এনসিপি’র মতো একটি নতুন দলের এমন মাটির কাছাকাছি প্রচারণা এবং সরাসরি জনসম্পৃক্ততা নতুন বার্তা দিচ্ছে।
তাদের ভাষায়, “নাহিদ ইসলামের মতো একজন নেতা যখন বৃষ্টিতে ভিজে পথসভা করেন, তখন সেটি শুধু প্রচারণা নয়—বরং এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বার্তা, যা মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে।”
রাজনীতিতে নতুন হলেও তার ভাষণ, জনসংযোগ কৌশল এবং স্পষ্ট অবস্থান তাকে দ্রুত পরিচিত করে তুলেছে। তিনি সামাজিক সংহতি, ধর্মীয় সহাবস্থান, এবং তরুণ নেতৃত্বের অঙ্গীকার নিয়ে এনসিপি’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর আগে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।