দুই বছরের মাঝেই বসবাসের অনুপযোগী মাভাবিপ্রবির শেখ রাসেল হল
রিপোর্টার: রিয়াদুল ইসলাম,
টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হল, উদ্বোধনের মাত্র দুই বছরের মধ্যে নানা অব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়া হলটি এখন নানা সমস্যা ও অভিযোগে জর্জরিত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের ডাইনিংয়ে সরবরাহ করা খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। এছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগ দীর্ঘদিন ধরেই অকার্যকর। বিদ্যুৎ সংযোগ, লাইট, সুইচসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খুবই দুর্বল, যা বারবার নষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিশেষ করে ওয়াশরুম, বেসিন ও গোসলখানার নাজুক অবস্থা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। অপরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব জায়গা অনেকাংশে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিচতলা থেকে শুরু করে প্রতিটি তলায় বারান্দায় মাসের পর মাস ময়লা জমে থাকলেও সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
হলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনুপস্থিতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং অপ্রতুল সংখ্যার বিষয়টিও উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে। কাজ করার চুক্তি থাকলেও অনেকে সময়মতো উপস্থিত হন না, আবার কেউ কেউ অল্প কাজ করেই ফিরে যান। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হলের দেয়ালে বড় বড় ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়া, মেঝের টাইলসে জমে থাকা দাগ এবং দুর্গন্ধে আক্রান্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের চরম অস্বস্তিতে ফেলছে। গ্যাস সংযোগ না থাকায় রান্নার কাজ এখনো কাঠ ও লাকড়ি ব্যবহার করে করা হচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগ অপ্রতুল, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেখ রাসেল হল মনিটরিং টিমের সদস্য রাকিবুল ইসলাম রাব্বি বলেন, “পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপস্থিতি অনিয়মিত। তারা দৈনিক ভিত্তিতে টাকা পেলেও অন্যত্র বেশি আয় হলে সেদিন কাজে আসে না। চারজন দিয়ে পুরো হল পরিষ্কার রাখা সম্ভব না। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু কাজের প্রতি কেউ আগ্রহ দেখায় না।”
আবাসিক শিক্ষার্থী আরাফাত তরফদার বলেন, “হলে উঠার পর থেকেই দেখি ইন্টারনেট নেই, সুইচ নষ্ট, দেয়াল ফাটল ধরেছে। এখন ভাবি যদি কোনো ভূমিকম্প হয়, তবে এই হল টিকবে কি না সন্দেহ।”
একইভাবে শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ রাহাত জানান, “ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুপযোগী। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানালেও শুধু জনবল সংকটের অজুহাত দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ বলেন, “হলটি নতুন হলেও নির্মাণে কিছু ত্রুটি ছিল, যা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। গ্যাস সংযোগ ও ইন্টারনেটের বিষয়টি সরকারিভাবে নির্ধারিত প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। ক্লিনিং জনবলের অভাব রয়েছে, তবে দুই মাসের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি।”
শেখ রাসেল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।