
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস বাঙ্গালী জাতির জীবনের এক অবিস্মরণীয় গৌরব গাঁথা এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলায় ভবেরপাড়া গ্রামের আম্রকাননে গঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার’ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত বিভক্তির পর ‘পূর্ববাংলা’ হিসেবে এই বাংলাদেশ পাকিস্তানে অন্তভুর্ক্ত হলেও ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’। এভাবে অতিবাহিত হয় দীর্ঘ ২৩ বছর। কিন্তু এই সময়ে পাকিস্তানী শাসন-শোষণে অতিষ্ট হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অর্জন করে এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় মহান বিজয়। এভাবে অভ্যুদয় ঘটে স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন এক রাষ্ট্রের। আর নতুন এই রাষ্ট্র বিশ্বসভায় পরিচিত হয় ‘বাংলাদেশ’ নামে। এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রাপ্তির পিছনে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের অবদান ছিল অনন্য। আর তাই বাহান্নতম বছরেও আমাদের বারবার ফিরে ফিরে যেতে হয়, স্মরণ করতে হয় মুজিবনগর দিবসকে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শতাধিক তরুণ-যুবক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঢুকে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন। ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ নামে ভাস্কর্যটিসহ অন্য ভাস্কর্যগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ গতকাল বুধবার বলেন, এবার বড় পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালন করা হচ্ছে না। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো আবার নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।