
বাংলাদেশকে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের পিছনে কি খেলা চলছে?
বাংলাদেশ ভারতীয় ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে এতদিন নেপাল, ভুটান, মায়ানমারে পণ্য রফতানি করতো।
ভারতের এ সংক্রান্ত পণ্য রফতানির চুক্তি হয়েছিলো ২০২০ সালের ২৯ জুন। মূলত এটা ছিল ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি।
আর নেপাল ও ভূটানের সাথে ভারতের করা এই ট্রানজিট চুক্তির কারণেই বাংলাদেশ এই সুবিধা পেতো । এবার ঘোষণা দিয়ে সেই ট্রানজিট বন্ধ করে দিল উন্মাদ নরেন্দ্র মোদি সরকার।অর্থাৎ এখন আর শুল্কবিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ভারতের বন্দর, বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। সীমান্ত পেরিয়ে কন্টেনার, বন্ধ ট্রাক আর প্রবেশ করতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন হল ভারতকে হঠাৎ করে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল? উত্তর হচ্ছেন না। এটা সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত একটি কাজ।
ড.ইউনূসের চীন সফর নিয়ে ভারত যথেষ্ট অসন্তুষ্ট ছিলো।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে ভারত নির্ভরতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে ।
বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যেতো। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর মোদি সেই চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা চাপে রাখতে চেয়েছিল। ভারতের ভিসা বন্ধ করে দেয়।
ড.ইউনূস বিকল্প হিসেবে খুঁজে নিলেন চীনকে ।
চীনের কুনমিং এ বাংলাদেশের জন্য চারটি হাসপাতাল বরাদ্দ করা হয়েছে ।
চীনের উদ্যোগে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রোবটিক ফিজিও থেরাপির, কার্ডিভাস্কুলার , ভেহিকল সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
উগ্রবাদী মোদির এসব সহ্য হচ্ছিল না। তার ওপরে ডক্টর ইউনুস যখন বললেন, “সেভেন সিস্টার ল্যান্ডলক – আর আমরা সেভেন সিস্টারের অভিভাবক। “
তখন ভারতের ডায়রিয়া শুরু হয়ে গেল। এরই প্রেক্ষ্মিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চাপ দিয়ে ভারতীয় ভূখন্ড বন্ধ করে দেয়। এখন এর প্রতিক্রিয়ায়
বাংলাদেশ কি মংলা সমু্দ্র বন্দর বন্ধ করে দিবে ভারতের জন্য? আর এটা হতে পারে ভেবেই ভারত কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর ও মংলা আগের থেকেই দখলের হুমকি দিয়ে আসছে।
এই সপ্তাহে ত্রিপুরার মহাপাত্র প্রদ্যোৎ মানিক্য আবার হুঁশিয়ারি দিলেন – “উই উইল ডু ইট, এট এনি কস্ট। ১৯৪৭ এ আমাদের চট্টগ্রাম হাতছাড়া করা উচিত হয়নি ।
এই ভুল আমাদের ভোগাচ্ছে । “
তাদের উদ্দেশ্য এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি কি আপনারা বুঝতে পারছেন তো?
ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন।
বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধায় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সহজে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরামে যায় ।
ভারতের সেভ হয় ৩০% অর্থ , সাথে সময় ।
কিন্তু বাংলাদেশ যদি এই পথ বন্ধ করে দেয় সেক্ষেত্রে
এর বিকল্প হিসেবে ভারত ২০০৮ সালে মায়ানমারের সাথে ” Kaladan Multi-Model Transit Transport project ( KMTTP) চালু করে ।
কিন্তু বর্তমানে এই প্রজেক্ট নিরাপদ নয়।প্রথমত , যে রাজ্য দিয়ে এই ট্রানজিট চালু হয়েছে মায়ানমারের সে রাখাইন রাজ্য এখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির দখলে। এ পথ নিরাপদ না ।
দ্বিতীয়ত , একই রাজ্যকে চীন ” Belt And Road Initiative (BRI) ব্যবহার করছে । যা ভারতের KMTTP এর অঞ্চলকে ছেদ করে । মায়ানমারের উপর ভারতের চেয়ে চীনের প্রভাব বেশি। তাই ভারত সেখানে পাত্তা পাবে না ।
তৃতীয়ত, সময় অনেক বেশি যাবে । ব্যয় বেশি হবে। সুতরাং এটি লস প্রজেক্ট ।
অর্থাৎ মংলা বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দর যদি বন্ধ করা হয় , ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশে ভারতের সকল ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করতে হবে এবং এটা এখন জনগণের একমাত্র দাবী।
এতদিন শেখ হাসিনা শুধু ভারতকে দিয়েই গিয়েছে।
হাসিনা একবার গর্ব করে ভারতের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন – “ভারত কখনোই বলতে পারবে না আমরা ভারতকে ঠকিয়েছি । বরং ভারতকে বেশিই দিয়েছি।”
গত ২০২৪ সালের অর্থবছরেও ভারত আমাদের দেশে রফতানি করে ১২.৯০ মার্কিন ডলার। আর আমরা ১.৮ বিলিয়ন!
ভারত বাংলাদেশের কখনোই বন্ধু ছিলো না। ছিল সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী।
স্বার্থে আঘাত লাগলে ক্ষতি করতে তারা পিছপা হয় না। এমন কংসমামা মার্কা বন্ধু থেকে পরিত্রাণ এখন আমাদের সময়ের দাবি। সবাই সচেতন হোন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হোন এবং ভারতকে পরিহার করুন।