
সেনাবাহিনীকে জনগণের প্রতিপক্ষ বানানোর পায়তারা করছে আওয়ামী লীগ।
দীর্ঘ সতেরো বছরের অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে হারিয়ে একপ্রকার উন্মাদ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। বেশ্যার আসল রূপ ধরা পরলে নাকি প্রকাশ্যে অপকর্মে লিপ্ত হতে ভয় পায় না। তেমনি দশা হয়েছে এদেরও। দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে এমন কোনো অপকর্ম নাই যার দ্বারা বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করে নি। সনাতনী আন্দোলন, আনসার বিদ্রোহ,রিকশা ওয়ালাদের আন্দোলন, গার্মেন্টস কর্মীদের আন্দোলন, পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করা, ভারতকে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা তৈরি করা সহ সকল অপকর্মই বাংলাদেশের সচেতন জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিয়েছে। লুটপাটের অঢেল অর্থ,দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী এবং অবৈধ অস্ত্র দিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে আবার প্রচার করে বেড়ায়, “আগেই ভালো ছিলাম!” দেশের প্রতিটি সেক্টরে পার্শবর্তী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা এজেন্ট ঢুকিয়ে স্বাধীনতাকে আগেই হুমকির মুখে ফেলে রেখেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় বিষয়গুলো শত্রুরা জেনে যাচ্ছে অনায়াসে! বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের শুরু থেকেই এই ছায়া শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে যাতে সফল হতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ এবং ভারত তাদের দেশী-বিদেশী এজেন্টদের কাজে লাগাচ্ছে। সাথে লুটপাট ও পাচারের পাহাড়সম অর্থের বিনিয়োগ তো আছেই। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একমাত্র মিত্র ছিলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। তাই সোনার হাঁস হারিয়ে এখন তারাও দিশেহারা। বাংলাদেশে ভারত এবং আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এখন এক। আওয়ামী লীগের দরকার হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং ভারতের দরকার তাদের মনমতো একটা তাবেদার সরকার। তাই এই ঐক্যবদ্ধ অপশক্তি বাংলাদেশ বিরোধী নানান অপতৎপরতায় মিলেমিশে কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় কূটনীতিক ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ঘনঘন বাংলাদেশ সফর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে দেখা যাচ্ছে। তারা প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান পদের দায়িত্বশীলদের বিভিন্ন রকমের প্রলোভন ও চাপ দিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার দেশ ও জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে এই টোপ গিলেও ফেলছে। জুলাই বিপ্লবের ঐক্যবদ্ধ শক্তির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে ফায়দা নিচ্ছে এসব এজেন্ট তথা তাদের প্রভূরা। ৫ আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো তারা আপোষ করেনি। সেই সেনাবাহিনীর মধ্যে বিগত সতেরো বছরে ঘুন পোকা ঢুকিয়ে দিয়েছে দেশদ্রোহী হাসিনা সরকার। গুটিকয়েক অসৎ অফিসার পুরো সামরিক বাহিনীর ইমেজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এরা ব্যক্তিস্বার্থকে দেশের স্বার্থের উপরে স্থান দিয়েছে। তাইতো এদের একগুয়েমি সিদ্ধান্ত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর পিছনে বসে তালি বাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ তথা ভারত।ভারত দক্ষিণ এশিয়ার এমন একটা আগ্রাসী শক্তি যার সাথে তার প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নাই। এই আগ্রাসী দেশটি দু-দুটো স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে জোর করে দখল করে নিয়েছে। কাশ্মীরকে জন্মলগ্ন থেকেই জবরদখল করে রেখেছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই মাথা তুলে দাড়াতে পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে। এদেশের বাজার একচেটিয়াভাবে দখল করেছে এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এদেশের জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। এদেশ সামরিকভাবে শক্তিশালী হোক সেটা তারা কখনোই চায়নি। তার সর্বশেষ নজির চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কেনার সময় সরাসরি বাঁধার সৃষ্টি করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের অস্ত্র এবং ট্রেনিং দেওয়া হয় ভারতের মেঘালয় থেকে। এছাড়াও ইসকন সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে দেশটি। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি একমাত্র ভারত নির্ভর থাকবে এটাই তাদের একমাত্র চাওয়া। তাইতো ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার উদ্দেশ্যে চীন সফর করতে চাইলে জেএমবিকে দিয়ে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালায়। পরে জানা যায় জেএমবি’র জঙ্গীদের জন্য বিস্ফোরক ডিটোনেটর পাউডার ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই সময় খালেদা জিয়া চীন সফর বাতিল করেছিল। বর্তমান ইন্টারিম সরকারের প্রধান বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে চীন সফর করবেন নিকট ভবিষ্যতে। তাই আবার সেই চাণক্যবাদি শক্তি পুরনো রূপে ফিরে এসেছে। এবার তারা সামরিক বাহিনীর মাঝে তাদের পোষা সুবিধাভোগীদের ব্যবহার শুরু করেছে। যেখানে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিতাড়িত এবং জনগণের দ্বারা প্রত্যাক্ষ্যত একটি দলকে আবার পুর্নবাসিত করার সাংর্ঘষিক একটি ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। এর ফলে স্বাধীনতার রক্ষক সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনচেতা জনগণকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার প্রধানের চীন সফর বাতিল করতে হবে। তবে আগ্রাসী শক্তি এবং তাদের এদেশীয় এজেন্টদের একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। ২০২৪ শের পরবর্তী বাংলাদেশ কিন্তু আর আগের জায়গায় নেই। তাই সাবধানে পা ফেলবেন। এদেশের জনগণ এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করতে শিখে গেছে। তাদেরকে ডিফেন্সিভ থাকতে দিন। অফেন্সিভ খেলা শুরু করলে কিন্তু আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
(লেখক :রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তরুণ রাজনীতিবিদ)