গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ নাসিমুল গনি বলেছেন, যশোর জেলার প্রতীক হচ্ছে খেজুর গাছ। আমি অত্যান্ত আনন্দিত যে আমাদের অঞ্চলের উৎপাদিত খেজুরের গুড় আজ জিআই পন্য হয়েছে। খেজুর গাছ কাটা সহজ কাজ না, এটি বছরে একবারই কাটা হয়, সে জন্য বিশেষজ্ঞ গাছি দিয়ে গাছ কাটলে রস গুড় সব কিছুই মানসম্মত হবে, তাই এ দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি গতকাল দুপুরে যশোরের চৌগাছায় তিনদিন ব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলার সমাপনি দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এক সময় আমাদের যশোর অঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত কিন্তু আজ সেটি হারিয়ে যেতে বসেছে। আমি জানতে পেরেছি চৌগাছায় খেজুর বাগান তৈরীতে প্রশাসন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। সরকারী জমি, রাস্তার পাশে এমনকি পতিত জমিতে বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগতে হবে এবং তার পরিচর্জা করতে হবে। চৌগাছা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার একজন নারি, তিনি এতো বড় একটি কাজ সুন্দর ভাবে শেষ করতে পেরেছে এ কারনে আমি খুশি। আমরা এখান থেকে বুঝতে পারি সুযোগ দিলে নারিরাও সব কিছু করতে পারে।
তিনি গাছি ভাইদের উদ্যোশে বলেন, বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার সকলেই দেখেছেন। খেয়াল করবেন ক্যালেন্ডারে একটি খেজুর গাছ দেখা যায় এবং একজন গাছি ওই খেজুর গাছ কাটছে, ভিষন ভালো লাগে ওই ছবিটি। এই ছবি দেখলে মনে হয় শীত চলে এসেছে। বাংলাদেশের শীতের আনন্দ খেজুরের রস আর তার সাথে পিঠা।
খেজুর গাছকে টিেিকয় রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানসম্মত গুড় উৎপাদন করলে তা সকলের কাছেই গ্রহনযোগ্য হবে। তবে এই মেলাতে আমি বেশ কিছু স্টলে দেখেছি গুড় ব্রান্ড করা হয়েছে। চমৎকার একটি কাজ। এ ধরনের ব্রান্ড করলে সেই গুড় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে আপনারা সহজে পাঠাতে পারবেন শুধু দেশে না বিদেশেও এ ভাবে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের ডিআই জি মোঃ রেজাউল হক পিপিএম, যশোর জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম, উপ-সচিব মাহাবুবুল আলম মিলন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইদ্রিস আলী, যশোরের পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহমেদ, আমেরিকা লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক লোক প্রশাসন বিভাগের প্রধান বিশ্ব বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল জুয়েল ইমরান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান প্রমুখ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইনের সঞ্চলনায় গুড় মেলার সমাপনি অনুষ্টানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম, সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র সেলিম রেজা আওলিয়ার, সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল হালিম চঞ্চল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওঃ গোলাম মোর্শেদ, সেক্রেটারী মাওঃ নুরুজ্জামান, থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তা সামছুন্নাহার, প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ, ডাক্তার আঃ রাজ্জাক, পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী বালি আবুল কালাম, জামায়াত নেতা মাওঃ আলাউদ্দিন, কামাল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শওকত আলী, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান লাল, তরিকুল ইসলাম ডবলু, আব্দুল লতিফ লতা, মজনুর রহমান, রবিউল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আব্দুল মান্নান, কৃষকদলের সভাপতি আজগার আলী, স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মেহেদী হাসান, ছাত্রদলের আহবায়ক জসিম উদ্দিনসহ উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন এলাকা হতে আগত গাছিরা, স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার আগে প্রধান অতিথি নাসিমুল গনি উপজেলা চত্ত¡রে গুড় মেলার প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন এবং গাছি ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। শেষে প্রধান অতিথি সেরা তিন গাছির হাতে পুরস্কার হিসেবে নগদ টাকা তুলে দেন।
এ বছর গাছিদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামের গাছি আব্দুর রাজ্জাক, পুরস্কার হিসেবে তিনি দশ হাজার টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আব্দুল গাজি ও তৃতীয় হয়েছেন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের গাছি মিজানুর রহমান। গুড় মেলায় অংশ গ্রহনের আগে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আগত সকল অতিথি চৌগাছা থানা পরিদর্শনে করেন।