
নির্বাচন কেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকুন: ঝিনাইদহে জামায়াতের আমির
আব্দুস সালাম (জয়), ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা শান্তির দেখা এখনো পেলাম না। বরং হাজারো অশান্তি আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর জনগণের শান্তি ছিল নির্বাসনে। ফ্যাসিস্ট আ’লীগ জনগণের শান্তিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশের দণ্ডমুণ্ডের মালিক হতে চেয়েছিলো, আল্লাহ তাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি কসম খেয়ে বলেন, আমরা যদি ক্ষমতায় যায় তবে দেশের মালিক হবো না, বরং জনগণের সেবক হবো। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হোন। তিনি ১৬ ই জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমির, ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি পদপ্রার্থী অধ্যাপক আলী আজম মো. আবু বকরের সভাপতিত্বে পখসভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল আলীম, সাবেক নায়েবে আমীর এবং ঝিবাইদ-৩ আসনের এমপি পদপ্রার্থী অধ্যাপক মতিয়ার রহমান,জেলা সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হাই,তাজুল ইসলাম, কাজী ছবির আহমেদ,জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি হারুন অর রশিদ, ঝিনাইদহ -৪ আসনের এমপি পদপ্রার্থী আবু তালেব,উপজেলা আমির ড.হাবিবুর রহমান, হরিনাকুন্ডু উপজেলা আমির বাবুল হোসেন,শৈলকুপা আমির মতিউর রহমান,কোটচাঁদপুর উপজেলা আমির মাওলানা তাজুল ইসলাম,কালিগঞ্জ উপজেলা আমির আব্দুল হক,শহর আমির ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি আরিফ হোসেন, শহর সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে আমীরে জামায়াত বলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে, তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তারা কথিত উন্নয়নের গালভরা বুলি শুনিয়েছেন। সবশেষে তারা পরপর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানেরা ছোট্ট একটা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। চাকরিতে কোটা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু ফ্যাসিষ্ট সরকার তাদের যৌক্তিক দাবি বন্দুকের গুলির মুখে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ঠিক তখনই ছাত্ররা আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিল। যারা আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল জনগণ তাদেরকে একদফা দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস শেখ হাসিনার ছিল না। যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ছাত্র জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে ইনশাআল্লাহ। তরুণ-যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশীশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব ইনশাআল্লাহ।শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম ছিল, যে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কর্মভিত্তিক যোগ্যতার কোনো মিল ছিল না। যে কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে বিদেশে কাঙ্খিত চাকরি পায়নি। আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যার মাধ্যমে সন্তানেরা শিক্ষিত হয়ে দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই দেশবাসীর সেবা করবে। শিক্ষিতরা তাদের দায়-দায়িত্বগুলো বুঝতে পারবে, এমন একটি শিক্ষা আমরা চাই। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে নৈতিকতা ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালো টাকা ও পেশীশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদেরকে না বলে দিতে হবে। আমরা কারও টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হোন।