সংবাদ ৭১ ডেস্ক
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে আইয়্যামে জাহেলিয়তের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খৃস্টাব্দের সুবহে সাদেকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভাস্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ’ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়। জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন । চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন।’তৌহিদেররই মুর্শিদ’ অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামের উপর নিপীড়ন শুরু করে। বহুমাত্রিক শয়তানী চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। মহান আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি একপর্যায়ে তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামকে হত্যার নীলনকশা প্রনয়ন করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খৃস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে। ২৩ বছর অক্লান্ত শ্রম অসীম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কামিয়াবী অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে ’আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসাবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাঁকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পন্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসাবে স্থান দিয়েছেন। বৃটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তাঁর আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ও ওফাত দিবস একদিনেই বলেই কথিত আছে। তবে তারিখ-সময় এবং বার নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। তবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে, এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সকল ইতিহাসবিদ উলামায়ে কেরাম একমত। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২) জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। কোন বর্ননায় ২ রবিউল আউয়াল,৮ রবিউল আউয়াল,১০ রবিউল আউয়াল,১২ রবিউল আউয়াল,১৭ রবিউল আউয়াল,রবিউল আউয়াল এর আট দিন বাকী থাকতে। আবার কোন কোন বর্ননায় রমযান মাসের ১২তারিখ। এসব বর্ণনার মধ্য থেকে হাফেজ ইবনে কাছির রহ. ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে ‘দুই’ ‘আট’ ও ‘বার’ তারিখের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। আর মুহাম্মাদ বিন সাআদ রহ. ‘তবাকাতুল কুবরা’ নামক গ্রন্থে দুই ও দশ তারিখের মতকে গ্রহণ করেছেন। বার তারিখের মতটি প্রসিদ্ধ।কেউ কেউ বলেন, রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখ মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। অধিকাংশ হাদিসবিশারদ একে বিশুদ্ধ বলেছেন।মহানবী (সা.)-এর জীবনী লেখকদের মধ্যে ইবনে ইসহাক প্রথম সারির জীবনীকার। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) হাতিবাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন।(সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-১, পৃ. ১৫৮)।আধুনিক যুগে সিরাতবিষয়ক গ্রন্থ ‘আর রহিকুল মাকতুম’-এ নামক এসেছে, ‘সায়্যিদুল মুরসালিন মক্কায় বনি হাশিমের ঘাঁটিতে সোমবার সকালে ৯ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন, যে বছর হাতির ঘটনা ঘটে। সে বছর পারস্য দেশের বাদশাহ আনু শিরোয়ার ক্ষমতা গ্রহণের ৪০ বছর পূর্ণ হয়। (আর রহিকুল মাকতুম, খণ্ড-১, পৃ. ৪৫)।মতভেদ থাকলেও প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে পালন করেন মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষে সীরাতুন্নবীর (সা.) আলোচনা,দরূদ পাঠ,দান-সদকা করে থাকেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেমিকরা অহর্নিশি ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকেন।
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বা আনন্দঘন রাসুলের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতের উপর আলোচনা,সিম্পোজিয়াম,সেমিনার ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন র্যালী বের করবে।দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সরকারী ছুটির দিন।জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্ত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করেন।