তিন মাসের বিরতির পর আজ খুলছে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার
তারিকুল ইসলাম আলভী
আজ, ১ সেপ্টেম্বর, দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার। বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানিয়েছেন, জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল, এবং পর্যটকদের জন্য আজ থেকে সুন্দরবনের দরজা পুনরায় উন্মুক্ত করা হবে। পূর্বের মতো, জেলে এবং বাওয়ালিরা তাদের স্টেশন থেকে পাস ও পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন, পাশাপাশি পর্যটকরাও এখন সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারবেন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এই তিন মাস, অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট, সুন্দরবনের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ কারণে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল।
খুলনার পাইকগাছা শান্তা বাজার এলাকার জেলে আবু মুসা ও সাফায়েত হোসেন জানান, তিন মাস পর মাছ ধরার অনুমতি পেয়ে তারা অত্যন্ত আনন্দিত এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তাদের ট্রলারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তারা পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন।
তবে, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সেক্রেটারি নাজমুল আযম ডেভিডের মতে, যদিও আজ থেকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে, তবুও এটি পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য খুব বেশি উপকারে আসবে না। কারণ এই সময়টা পর্যটনের অফ সিজন। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবনের পর্যটনের মৌসুম থাকে। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যেখানে দেড় সহস্রাধিক পর্যটন শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
সাতক্ষীরার গাবুরা ইউনিয়নের জেলে গোলাম রব্বানী জানান, বছরের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। মৎস্য বিভাগ প্রতিবছর মাছের প্রজনন মৌসুমে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখে, কিন্তু সুন্দরবনের জেলেদের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা বা বরাদ্দ নেই।
সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান জানান, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে পাঁচ শতাধিক ট্রলার পর্যটকদের পরিবহনে নির্ভরশীল। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার ফলে হাজারেরও বেশি ট্রলারচালক ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। তবে, পরিস্থিতি ভালো হলে এই রেঞ্জে আসা পর্যটকদের জন্য আধুনিক লঞ্চ সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং মাছের প্রজনন সুরক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সকল ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আজ থেকে বনজীবী ও পর্যটকরা নিয়ম মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। বনবিভাগ তাদের সকল ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।