শোকের স্মরণে গুমের শিকার জনি ও রেজোয়ানকে ফেরতের দাবি পরিবারের
তারিকুল ইসলাম আলভী
সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক ডা. মোখলেসুর রহমান জনি এবং যশোরের কলেজছাত্র রেজোয়ান হোসেনের পরিবারের সদস্যরা অন্তবর্তী সরকারের কাছে তাদের প্রিয়জনদের ফেরত পাওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। গুম হওয়ার যন্ত্রণা ও তাদের প্রিয়জনদের হারানোর বিষাদ মূর্ত হয়ে ওঠে পরিবারের কান্নাজড়িত কণ্ঠে।
আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট), ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এই দাবি তোলা হয়। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিকার খুলনার ফোকাল পার্সন মুহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মানবাধিকার কর্মী কেএম জিয়াউস সাদাত।
মানববন্ধনে গুমের শিকার জনির বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর প্রায় আট বছর ধরে কোনো খোঁজ দিতে পারেনি তারা। জনিকে হারিয়ে আমাদের সংসার ভেঙে গেছে। জনির মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ চাই এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
বেনাপোলের কলেজছাত্র রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন বলেন, “২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আমার ভাইকে আটক করে এবং পরে তাকে গুম করা হয়। আজ আট বছর পরেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমার মা-বাবা ভাইয়ের অপেক্ষায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
দিবসের ঘোষণাপত্রে জানানো হয়, “গুম মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করেছে, যা ২০০৯ সাল থেকে ব্যাপকভাবে শুরু হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের সময় এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পায়।”
অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৭০৯ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর আয়নাঘর ও অন্যান্য বন্দিশালাগুলো থেকে কিছু গুম হওয়া ব্যক্তি ফিরে আসায় অন্যদের মাঝেও প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আশা সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মসূচিতে আরও বক্তৃতা করেন অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, মুনীর চৌধুরী সোহেল, আব্দুর রাজ্জাক রানা, অ্যাডভোকেট অশোক কুমার সাহা, অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ, মাহবুব আলম বাদশা, ইসমত আরা কাকন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, এ এইচ শামিমুজ্জামান, রকিবুল ইসলাম মতি, আশরাফুল ইসলাম নূর, মোহাম্মদ বশির হোসেনসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মীরা।
পরিবারের সদস্যরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সরকার অবিলম্বে তাদের প্রিয়জনদের সন্ধান দিয়ে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।