আ.লীগ নেতার তাণ্ডব: খুলনায় তেল ব্যবসায়ীদের জিম্মি, পরিবহন দখল ও হুমকি
তারিকুল ইসলাম আলভি
খুলনার মহানগর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে তেল লুট এবং পরিবহন দখলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরার তেল ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন লস্করের গাড়ি আটকের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ডিপোর কিছু কর্মকর্তাও এই অনৈতিক কাজে জড়িত, যা নিয়ে পুরো জ্বালানি সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত যমুনা ডিপো থেকে জ্বালানি তেল নিতে যান মো. জাকির হোসেন লস্কর। তিনি তার লস্কর ফিলিং স্টেশনের জন্য তেল সংগ্রহ করতে সেখানে গেলে, আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন তার মালিকানাধীন ফিলিং লরিটি আটক করেন। ড্রাইভার জালাল উদ্দিন গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
যমুনা ডিপোর সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে লস্কর ফিলিংয়ের লরিটি তেল বোঝাই করে ডিপো থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে ফরহাদ হোসেনসহ ৪-৫ জন লোক ডিপোর ভেতরে প্রবেশ করেন। ফরহাদ ডিপোর উপব্যবস্থাপকের কক্ষের বারান্দায় ড্রাইভারকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর গাড়িটি ডিপোর পাশে পার্কিং করে রাখা হয়, এবং প্রায় আধাঘণ্টা পরে সেটি ডিপোর বাইরে রাস্তার পাশে আটক রাখা হয়। গাড়িটি বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছিল।
ড্রাইভার জালাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমি গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সময় ফরহাদ ও তার দলবল আমাকে গাড়ি রেখে চলে যেতে বলে। তাদের প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র ছিল, আমি ভয়ে অনুনয় বিনয় করলে তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে আমি বিষয়টি আমার মালিককে জানাই।”
এ বিষয়ে লস্কর ফিলিং স্টেশনের মালিক জাকির হোসেন বলেন, “ফরহাদ দীর্ঘদিন ধরে আমার গাড়ি দখলের চেষ্টা করছে। ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে ফরহাদের সঙ্গে আমার ভাই জোনায়েদ হোসেনের শত্রুতা রয়েছে। এ কারণে আমার ব্যবসায়িক ক্ষতি করতে সে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে।” তিনি আরও জানান, “আমি খালিশপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি, বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছি।”
যমুনা ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক তানভীর হাসান ডালাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে, ফরহাদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি লস্কর ফিলিং স্টেশনের মালিক জোনায়েদের কাছে টাকা পাব। তাই তার ড্রাইভারকে বলেছিলাম যেন সে মালিককে জানায়। অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, সিসিটিভি ফুটেজেও এমন কিছু দেখা যায়নি।”
এই ঘটনায় জ্বালানি সেক্টরে উত্তেজনা এবং অস্থিরতা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।