স্টাফ রিপোর্টার
চৌগাছার ওপর দিয়ে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদের খননকাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে নদ পাড়ের জমাকৃত মাটি সরানোর কাজ। এই কাজ শেষ হলেই নদ এলাকা ত্যাগ করবেন ঠিকাদারের লোকজন। হঠাৎ করেই যেনতেনভাবে খননকাজ শেষ করে দ্রুতই এলাকা ত্যাগের বিষয় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকার যে কাজে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তার সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে বর্তমান সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।
স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে কপোতাক্ষ নদ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের শেষ সময়ে অর্থাৎ জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পৌর এলাকার হুদাপাড়া হতে নদ খননের কার্যক্রম শুরু হয়। চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রিজ হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হয়েছে। নদ খননে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে দুই বছরে খননকাজ শেষ করার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা চার বছরে এসে শেষ হয়েছে। আদৌ সঠিক পরিমাপে খনন হয়েছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নদ পাড়ের অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা এখনও দৃশ্যমান। অথচ এরই মধ্যে খনন শেষ করা হয়েছে। খনন কাজে নিয়োজিতরা বলেছেন, নির্ধারিত পরিমাপে নদের গভীরে খনন হয়েছে এবং নদের আড় হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার।
এলাকাবসী জনান, চলতি বছরের শুরু থেকে বেশ ভালোভাবেই চলতে থাকে খনন কাজ। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নদ খননকাজ শেষ করতে যেন ঠিকাদার মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে আগস্টের ৫ তারিখের পর তারা নদের কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।
নদ পাড়ের বাসিন্দা চঞ্চল কবির, মজনুর রহমান, টিপু সুলতান, আলী বক্স বলেন, সরকার যে মহৎ উদ্দেশে খনন কাজ শুরু করে তা বিফলে যেতে বসেছে। নদ খননের নামে কর্তৃপক্ষ মানুষের সাথে তামাশা করেছে। নদের জমি দখলমুক্ত করা হয়নি। নিদিষ্ট পরিমাপে গভীর ও আড় খনন হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। নদের পাড়ে জমা করা মাটি যেভাবে রাখা হচ্ছে তাতে দু-এক বছর যেতে না যেতেই সমুদয় মাটি আবারও নদে এসে পড়বে। ফলে যা হবার তাই হবে। তারা যেভাবে নদ খনন করেছেন তাতেকরে অবৈধ দখলদারকে আরও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
কপোতাক্ষ পাড়ের জেলেরা বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে যখন নদ খনন শুরু হয় তখন আমরা আনন্দে আত্মহারা হই। স্বপ্ন দেখতে শুরু করি নদ আবার তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে। নদে থাকবে অঢেল পানি, মিলবে দেশি প্রজাতির মাছ।
একটি সূত্র বলছে, কপোতাক্ষ খননের মূল ঠিকাদার যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার। তিনি একাধিক সাব কন্ট্রাকটারের মাধ্যমে নদ খনন কাজ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পরপরই এই নেতা আত্মগোপনে। তিনি সাব কন্ট্রাকটারদের দ্রুত খননকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশে কাজে নিয়োজিতরা রাতদিন সমানভাবে কাজ করে এলাকা ছাড়তে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।
এস্কেভেটর চালক জনি আহমেদ বলেন, আমাদের যেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
খনন কাজ দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত মোশারফ হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বেশি কিছু বলতে পারিনা। আব্দুল লতিফ নামের একজন আছেন তার নিকট জানতে হবে। আব্দুল লতিফের মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি জুমার নামাজের পর দিতে রাজি হন। কিন্তু জুমার নামাজের পর হতে মোশারফ হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।