ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘিরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে চলছে একটানা বিক্ষোভ। নিহত চিকিৎসক ছিলেন কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। ৩১ বছর বয়সী ওই তরুণীর দেহের ময়নাতদন্তে চরম যৌন লাঞ্ছনার প্রমাণ মিলেছে।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এই অভিযোগ ওঠার পর সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কার্যত ফুঁসে উঠেছে। কলকাতার বিক্ষোভকারীরা জানান, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। ধর্ষককে ফাঁসি দাও, নারীদের বাঁচাও।’ মোনালিসা গুহ নামে স্থানীয় এক নারী কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বলেছেন, ‘নারীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা থামছে না।
আমরা প্রায় প্রতিদিনই হয়রানির সম্মুখীন হই।’ সঙ্গীতা হালদার নামের আরো একজন নারী বলেছেন, ‘তবে ভয়ের কারণে বাইরে না যাওয়া, এটা কোনো সমাধান নয়। আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সামনে এলে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। অভিযোগ উঠেছে, গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জয় রায় প্রথমে অচেতন করেন তরুণী ওই চিকিৎসককে এবং ধর্ষণ করেন। ধর্ষনের পর তাকে খুন করা হয়।
গত ৮ আগস্ট রাতে টানা ৩৬ ঘণ্টার ‘অন-কল’ ডিউটিতে ছিলেন তরুণী চিকিৎসক। রাতে প্যারিস অলিম্পিকে জ্যাভেলিন থ্রো’র ইভেন্ট টিভিতে দেখে এবং অনলাইনে আনানো খাবার সহকর্মীদের সঙ্গে খেয়ে চারতলার পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে যান তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছুক্ষণ পর ওই ঘরে ঢোকে সঞ্জয়। সেমিনার হলে ঢুকে দরজা বন্ধের চেষ্টা করে। লক খারাপ থাকায় দরজা বন্ধ করা যায়নি। প্রথমে তরুণী চিকিৎসকের গলা টিপে ধরেন অভিযুক্ত। ঘুম ভেঙে গেলে তিনি সঞ্জয়ের মুখ চেপে ধরেন। এ কারণে সঞ্জয়ের মুখেও একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
সঞ্জয়ও মুখ চেপে ধরেন ওই চিকিৎসকের। সঞ্জয়ের দুই হাতের নখের আঁচড়ে তরুণী চিকিৎসকের মুখে একাধিক ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ সময় সঞ্জয়ের হাত চেপে ধরেন তরুণী চিকিৎসক। তাই অভিযুক্তের দুই হাতেও ৬-৭টি নখের দাগ পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ধারণা করছে, ধস্তাধস্তির জেরে চশমার কাচ ভেঙে যায়। সেই ভাঙা কাচে তরুণীর চোখে আঘাত লাগে এবং রক্তপাত হয়। চিৎকার করলে মুখ আরো জোরে চেপে ধরে তরুণী চিকিৎসকে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। এত জোরে গলা টিপে ধরা হয়েছিল যে তার থাইরয়েড কার্টিলেজ ভেঙে যায় এবং অচেতন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায়ই তার পোশাক খোলা হয় এবং চালানো হয় বিকৃত যৌন নির্যাতন।
এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় এই নারী চিকিৎসকে। পরদিন সকালে জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তরুণী চিকিৎসককে যে সেমিনার রুমে ধর্ষণ ও খুন করা হয়, সেটি জরুরি বিভাগের চারতলায়। তদন্তে গিয়ে সিবিআই কর্মকর্তরা সেই ঘর সিল করে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, সিল ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেই ঘরে তারা ঢুকতে পারেনি বলে কলকাতা পুলিশের দাবি।