মিয়ানমার সীমান্তে আগুনের কুন্ডলী-ধোঁয়া, অনুপ্রবেশের শঙ্কা
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও দেশটির জান্তা বাহিনীর মধ্য যুদ্ধ এখনো চলমান রয়েছে। এতে বহু রোহিঙ্গাদের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটছে। এতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মিয়ানমারের টেকনাফ সীমান্তে রাখাইনে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বলছে, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালানোর সময় ড্রোন হামলায় ২০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এদিকে বাংলাদেশে বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য গত এক সপ্তাহে আট হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে, শরণার্থী ক্যাম্পসহ স্থানীয়দের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতারা। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) পক্ষ থেকে কোন আনুষ্টানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়া থেকে সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যের সুদাপাড়া গ্রামে ধোঁয়ার কুন্ডলি উড়তে দেখা যায়। ওপারে বিকট শব্দ শোনা গেছে।’
সূত্র জানায়, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। এর জেরে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা টহল জোরদার করেছেন। অনুপ্রবেশের শঙ্কার মধ্যে তারা সতর্ক অবস্থায় আছেন।
মিয়ানমারের আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের।
এ বিষয়ে মিয়ানমারে থাকা এক স্বজনের বরাত দিয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ‘আজকের হামলায় বহু মানুষের প্রাণ হানি হয়েছে। তাদের মংডু টাউশিপ এলাকা খালি করে দিতে নির্দেশ দেয় আরকান আর্মি। আবার অনেক মানুষদের ধরে নিয়ে অন্যগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে তাঁরা (আরকান আর্মি)। বলতে গেলে সেখানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্য মংডু টাউনশি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রস্তুতি শেষ করেছে আরকান আর্মি। ফলে এবার টাউনশিপে একের পর এক ব্যাপক বোমা হামলা চালাচ্ছে। ইতি মধ্য মংডুর মগ্নিপাড়, সিকদার পাড়া, নরবনিয়া, উকিল পাড়া, নয়াপড়া বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।’
মিয়ানমাওে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। এতে মর্টারশে-গুলিতে শত শত রোহিঙ্গা প্রাণ হারাচ্ছে। আবার অনেকে প্রাণে বাচঁতে নাফনদ-সাগর পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও আরকান আর্মি তাদের চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যার ফলে প্রতিদিন সেদেশে রোহিঙ্গার মৃত্যু খবর আমরা পাচ্ছি। ইতি মধ্য গত এক সপ্তাহের মধ্য অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। যারা অনেকে ক্যাম্পে আগে থেকে থাকা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আবার অনেকে গ্রামে মধ্য থাকছে। ‘তবে দুঃখজনক হলে সত্য, মিয়ানমার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা একূলে এসে, লুটপাতের শিকার হচ্ছে বলে যোগ করেন এ রোহিঙ্গা নেতা।;
টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুলজ্জামান বলেন, বিকেল থেকে ওপারে বিকট শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তে আগুনের ধোঁয়াও দেখা গেছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে বাসিন্দারা ওপারে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন।
নাফনদী-স্থলপথ অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যাতে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়েছেন বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরে বেশ কয়েকটি স্থলে পয়েন্টে নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্য আমরা বহু অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করেছি।’