
চৌগাছায় বৃষ্টির অভাবে কৃষকদের
রোপা আমনে সেচের পানিই ভরসা
মেহেদী হাসান শিপলু
স্টাফ রিপোর্টার
বৃষ্টির অভাবে চৌগাছার রোপা আমন চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বর্ষার ভরা মৌসুমে কাংখিত বৃষ্টির দেখা নেই তাই চাষিরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে সেচের পানি দিয়ে ধান রোপন শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে চৌগাছাতে মোট ১৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধান রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুলত বাংলা সনের আষাঢ় মাস হতে এই ধান রোপনের কাজ শুরু হয় এবং শ্রাবন মাসের পুরোটাই চলে রোপন কাজ। এ বছর বৃষ্টি বিলম্বে হওয়ায় ধান রোপনে কিছুটা দেরি হচ্ছে তারপরও রোপন কাজ শেষে লক্ষমাত্র অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের তেঘরি, মুক্তদাহ, সাদিপুর, রুস্তমপুর, পুড়াহুদা, চৌগাছা পৌর এলাকার ইছাপুর, বাকপাড়া, বিশ্বাসপাড়া সহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আকাশের বৃষ্টি না থাকায় প্রতিটি এলাকায় স্যালো মেশিনের মাধ্যমে জামিতে সেচ দিয়ে চলছে রোপন কাজ। এ সময় কথা হয় তেঘরি গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক, আব্দুল আজিজের সাথে। তারা বলেন, আষাঢ় মাসে ঝুম বৃষ্টি হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আকাশের বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে ধান লাগানোর সময় হলে সেচের পানি দিয়ে রোপন কাজ শেষ করি। এরপর বৃষ্টিপাত হলে ধান ওই বৃষ্টিতে বেড়ে উঠে। সেচের পানিতে ধান রোপনে খরচ বেশি সে কারনে আমন ধানে লাভের আশা খুবই কম। মুক্তদাহ গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, সময়ের সাথে পাল্টে গেছে অনেক কিছু, পাল্টে গেছে বৃষ্টি হওয়ার সময় সূচি। আগে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস এলে বৃষ্টির কারনে ঘর থেকে বের হওয়া যায়নি। বৃষ্টির পানিতে মাঠ ঘাট থৈথৈ করেছে। কৃষক মনের সুখে মাঠে ধান রোপন করেছেন। কিন্তু এখন সেই বৃষ্টি নেই। তবে কৃষকের কাজ কিন্তু থেমে নেই। সেচের পানি দিয়ে রোপন কাজ চলছে ঠিকই তবে এতে খরচ বেশি। কৃষি উপকরনের দাম কৃষকের নাগালের বাইরে, সে সাথে আমন ধান রোপনে যদি সেচ দিতে হয় তাহলে বিঘা প্রতি কৃষকের অনেক ব্যয় বেড়ে যায়। ইছাপুর গ্রামের শামছুল আলম, রবিউল ইসলাম বলেন, কৃষকের কোন দিকেই শান্তি নেই। এখন শ্রাবন মাস বৃষ্টির পানিতে আমন ধান লাগানোর কথা কিন্তু সেটি হচ্ছে না। সেচের পানি দিয়ে আমন লাগানো অনেক দুরুহ ব্যাপার। মৌসুম শেষ হতে যাচ্ছে, ধানের চারার বয়সও বেশি হয়েছে। সে কারনে ব্যয় বেড়ে গেলেও বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে ধান লাগানো হচ্ছে। এতো কষ্ট ও ব্যয় করে ফসল উৎপাদন করার পর যখন ফসল উঠা শুরু করবে ঠিক সেই সময় তার নায্য দাম থাকে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে কৃষক, সংশ্লিষ্ঠদের এদিকে নজর দেয়া জরুরী বলে মনে করছেন চাষিরা।
কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি ধান রোপনে জোনের দাম বেড়েছে কয়েক গুন, চাষ ও মই দেয়া খরচও সমান ভাবে বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে সার কীটনাশকের দাম। বিনা খরচের পানিতে যদি রোপন কাজ সম্পন্ন করা যায় তখনই লাভের আশা করা যায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধান লাগানো নিয়ে কৃষককে ভিষন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। সব কিছুরই দাম শুধুই বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না কৃষকের পরিশ্রমের দাম। সে কারনে কৃষকের প্রতিটি উৎপাদিত পন্যের নায্য দাম নিশ্চিতে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুসাব্বির হোসাইন বলেন, রোপা আমনের ভরা মৌসুমে কাংখিত বৃষ্টি না পেয়ে চাষিদের ধান রোপনে সমস্যা হচ্ছে। তবে বিলম্ব না করে সেচের পানিতে ধান রোপনের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি।