ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে গতকালই নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেন আরও কয়েকজন সমন্বয়ক। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করার কথা তাঁদের।
সরেজমিনে আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে উত্তরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। প্রধান সড়কে টহল জোরদার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আজমপুরে সড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থানও দেখা গেছে।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি রিফাত রহমান শামীম বলেন, জামায়াত-শিবিরের দুষ্কৃতিকারীরা আবারও এখানে ঝামেলা করতে পারে। এই খবরেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। আপনাদের নিরাপত্তা দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
যদিও এই প্রতবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর কোনো সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া যায়নি।
এরআগে, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। এক লিখিত ও ভিডিও বার্তায় তারা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিও জানান। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানান ৬ সমন্বয়ক।
লিখিত বার্তাটিত সই করেন মো. নাহিদ ইসলাম, মো. সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম।
এতে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ সহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছেন। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’
এর পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে, ব্ল্যাকমেইল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’
এর আগে গত কয়েকদিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই ৬ জনকে ডিবি হেফাজতে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, নিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু হতাহত হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, দেশব্যাপী সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ২৬৬।
সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে সহিংসতা উসকে দেয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের।