স্টাফ রিপোর্টার:
•• সিরাজগঞ্জ শহরে ৬ শতক জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি, দাম প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা
•• সিরাজগঞ্জ শহরে ১৫ শতক জায়গায় দুটি টিনশেড বাড়ি, দাম প্রায় তিন কোটি টাকা
•• বগুড়া শহরে ৫ শতক জায়গায় ডুপ্লেক্স বাড়ি, দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা
•• ঢাকার মিরপুরে দুই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, দাম প্রায় ৯০ লাখ টাকা
•• সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে অন্তত ১৪ বিঘা ফসলি জমি
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. জেহাদুল ইসলাম সরকার (৪৮)। তৃতীয় শ্রেণির এই চাকরির ১১তম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতন ৩২ হাজার ২৪০ টাকা। এই বেতনে চাকরি করেই কোটিপতি তিনি। বাস করেন ছয়তলা ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে।
অভিযোগ উঠেছে, এই চাকরি করেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জেহাদুল ইসলাম। আয়ের সঙ্গে নজিরবিহীন এমন বৈসাদৃশ্য থাকা এ ভূমি কর্মকর্তা বর্তমানে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই উপজেলার তিন নান্দিনা গ্রামের কৃষক মৃত আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হয়েই কোটিপতি!
জানা গেছে, জেহাদুল ইসলাম সরকার ১৯৭৫ সালের ২১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৯৬ সালে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী পদে যোগ দেন। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপরই কপাল খুলে যায় এ কর্মকর্তার। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে জমি খারিজ, খাজনা, নামজারি ও পর্চার কাজে ঘুস নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে বাসস্থানের ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। শুধু তাই নয়, বিদেশ যেতে ২০২৩ সালের ১১ মে স্ত্রী শারমিন সুলতানা, একমাত্র সন্তান রাতুল হাসান ও নিজের নামে পাসপোর্ট করতে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বিভাগীয় অনাপত্তি সনদ (এনওসি) নেন।
‘জমির নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই জেহাদুল ইসলাম সরকারকে ঘুস দিতে হয়। ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগে তিনি আগের কয়েকটি কর্মস্থলে বদলিও হয়েছিলেন। এত অনিয়ম-দুর্নীতির শাস্তি কি শুধুই বদলি?’- আব্দুর রাজ্জাক, ভুক্তভোগী
ভূমি সহকারী কর্মকর্তার যত সম্পদ
সরেজমিনে ও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জেহাদুল ইসলাম সরকার ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের সয়াধানগড়া দক্ষিণে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ছয় শতক জায়গা কেনেন। পরে ২০১৯ সালে সেখানে গড়ে তোলেন ছয়তলা বাড়ি। বাড়ি তৈরিতে খরচ হয় আরও অন্তত ছয় কোটি টাকা। বাড়ি নির্মাণের কথা বলে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন সিরাজগঞ্জ শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। বাড়িটির প্রতিটি তলার আয়তন আড়াই হাজার বর্গফুট। ওই বছরই একই এলাকার খানপাড়ায় তিন কোটি টাকা মূল্যে কেনেন দুটি টিনশেড বাড়িসহ ১৫ শতক জায়গা। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায় দেড় কোটি টাকা মূল্যে ৫ শতক জায়গা কিনে নির্মাণ করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি।
নজরদারির অভাবে প্রশাসনে লাগাম ছাড়াচ্ছে দুর্নীতি
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব: নতুন নাকি প্রচলিত আইনের প্রয়োগ?
দুর্নীতিবাজের ইবাদত কি কবুল হয়?
একমাত্র সন্তানের পড়াশোনার সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ৯০ লাখ টাকা মূল্যে দুই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন জেহাদুল ইসলাম সরকার। এছাড়া রায়গঞ্জ উপজেলার তিন নান্দিনা মৌজায় নিজ ও স্ত্রী-সন্তানের নামে অন্তত ১৪ বিঘা ফসলি জমি কিনে বর্গা দিয়েছেন বলে জেহাদুলের এক স্বজন জানিয়েছেন।
‘জেহাদুল ইসলাম ছাড়াও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এ মহল্লায় বসবাস করেন। তারা একেকজন দোতলা বাড়ির কাজ পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারেননি। আর জেহাদুল ইসলাম মাত্র কয়েক মাসেই ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে খানপাড়ায় তিন কোটি টাকার দুটি বাড়িও কিনেছেন।’ -শাকিল আহম্মেদ, প্রতিবেশী
তথ্যানুসন্ধান ও সরেজমিনে ঘুরে আরও জানা যায়, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জেহাদুল ইসলাম সরকার শুধু নিজের নামেই নয়, স্ত্রী ও ছেলের নামেও বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। রয়েছে ব্যাংক-ব্যালেন্স ও এফডিআর।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হয়েই কোটিপতি!
ছাড়তে পারেননি ঘুস নেওয়া
জেহাদুল ইসলাম সরকারের আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ায় বিস্মিত আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক স্বজন জাগো নিউজকে বলেন, জেহাদুল ইসলাম সরকার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হয়েই ঘুস লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। এসব কারণে অল্প সময়ে কয়েকবার বদলিও হয়েছেন। কিন্তু ঘুস নেওয়ার অভ্যাস আজও ছাড়তে পাড়েননি।
‘অনিয়ম ও-দুর্নীতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।’-কাজী সোহেল রানা, সদস্য, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, সিরাজগঞ্জ
ঘুড়কা ইউনিয়নের লাঙ্গনমোড়া গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ ৭১ বলেন, ‘জমির নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই জেহাদুল ইসলাম সরকারকে ঘুস দিতে হয়। ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগে তিনি আগের কয়েকটি কর্মস্থলে বদলিও হয়েছিলেন। এত অনিয়ম-দুর্নীতির শাস্তি কি শুধুই বদলি?’