নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ঢাকা কলেজ শাখার সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলের সন্ধান দাবি করেছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলে, আতিকুর রহমানকে গুম করা হয়েছে। রাসেল ১১ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তার বাবা আবুল হোসেন সরদার।
বৃহস্পতিবার, জুলাই ১১, ২০২৪, রাজধানীর নয়াপল্টনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন রাকিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজ আতিকুর রহমান রাসেল নেই, আমারা সবাই জানি, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ধরে নিয়ে গেছে। খবরের কাগজেও এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও তাকে হাজির করছে না, না আদালতে না তার পরিবারের কাছে। মা হারা একটি ছেলে কোথায় খাচ্ছে, কোথায় ঘুমাচ্ছে, কোন জায়গায় আছে, কোন আয়না ঘরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, আমরা জানি না।
তিনি বলেন, রাসেলের সন্ধানের দাবিতে তার বাবার যে আকুতি আমরা এখানে শুনলাম। এভাবেই বাংলাদেশের আকাশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য উল্কাপাত ঘটিয়েছেন এই ডামি সরকার।
আতিকুর রহমান রাসেলের গুম হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল জানায়, গত ১ জুলাই আজিমপুর এলাকা থেকে রাসেলকে সাদাপোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা রয়েছেন, তাদের আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বলতে চাই, গুম-খুনের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার, তার বিরুদ্ধে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে এবং ভারতের অবৈধ হস্তক্ষেপসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সোচ্চার হোন। ঢাকা কলেজের যেসব নেতা কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের বলছি, আপনাদের কলেজের সহপাঠী আতিকুর রহমান রাসেলকে গুম করা হয়েছে। তার সন্ধানে আপনারাও দাবি জানাবেন, সেটা প্রত্যাশা করি।’
রাসেলের নামে কোনও মামলা নেই, কোনও ওয়ারেন্ট নেই জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে আমরা শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এখন যদি আমাদের ভাইদের এভাবে গুম করা হয়, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রদল ভীত নয়।’
ছাত্রদলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল জানান, দ্রুত রাসেলকে তাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া না হলে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলন শুরু করবে ছাত্রদল। এই সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বকুল।
রাসেলের বাবা আবুল হোসেন সরদার তার ছেলের সন্ধান দাবি করে বলেন, ‘আমার দুইটা ছেলে, একটা বিদেশে থাকে আর রাসেল ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে। আমি লালবাগ থানায় ২ জুলাই জিডি করেছি। ছেলের মোবাইল বন্ধ…তার কোনও সন্ধান পাইনি, কেউ সন্ধান দেয়নি। পুলিশের উচ্চ পর্যায়েও গিয়েছি। ফলাফল শূন্য।’
আমার সন্তান ভদ্র ছেলে। কাউকে গালি পর্যন্ত দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ১১ দিন ধরে কোথায় আছে, কী খায়, আমি জানি না। আমি আমার সন্তান আমার বুকে ফেরত চাই।’
‘আমি জানি না আমার বাবা কী করছে? কী অপরাধ আমার বাবার? জীবনে একটা ককটেল মারেনি, একটা ছুরি হাতে নেয়নি, কোনও সময় মানুষকে ঢিল মারেনি। রাজনীতি করা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, এটা আমার বলার কিছু নেই। আমার ছেলে আজিমপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছে…আমি প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই,’ বলেন আবুল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।