চৌগাছার প্রধান সবজি বাজারের মাঝখানে জন্ম নেয়া একটি বটবৃক্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বাজারে আগত মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশাল ফাঁকা মাঠের মাঝখানে ডালপালা মেলে গাছটি নিরবে মানুষকে ছাঁয়া দিয়ে যাচ্ছে। বটের ফল খেতে দিনের বেশির ভাগ সময় পখপাখালির মেলা বসে গাছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এলাকা মুখরিত থাকে।
মঙ্গলবার ৯ জুলাই সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির এই গাছটি তার শেকড় কোনভাবেই মাটিতে নামাতে পারছেনা। ফলে বড় ধরনের ঝড় হলে গাছাটি উপড়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
জনশ্রুতি আছে বৃটিশ শাসনামলে বর্তমান চৌগাছা পৌর এলাকাতে চারটি বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ ছিল। দুটি গাছ ছিল কপোতাক্ষের পশ্চিমে ও দুটি ছিল নদের পূর্বপাশে। কপোতাক্ষে বৃটিশদের জাহাজ চলচালের সময় রাতের আঁধারে ওই বটবৃক্ষের মগডালে লন্ঠন জ্বালিয়ে নিশানা ঠিক রাখা হত। সেই সময়ের বিশাল বটবৃক্ষের নামানুসারে পরবর্তীতে চৌগাছার নামকরণ হয়।
সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু, হারিয়েছে চৌগাছার সেই বিশাল বিশাল বটবৃক্ষ। কিন্তু পুরনো স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকে চেষ্টা করেছেন। কেউ সফল হয়েছেন, কেউ হয়নি।
বটবৃক্ষটি যে জায়গায় বেড়ে উঠেছে ওই স্থানটিতে চৌগাছার প্রধান সবজি বাজারের অবস্থান। সপ্তাহের শুক্র, সোম ও বুধবার বটতলার নিচেসহ পাশ্ববর্তী খালি স্থানে বিক্রি হয় সব ধরনের সবজি।
বটবৃক্ষের নিচে প্রায় ৮/১০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের নুর ইসলাম, বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম, নিয়ামতপুর গ্রামের ইন্তাজ আলী, ফুলসারা গ্রামের রহিম বক্স, মুক্তদাহ গ্রামের ইউছুফ আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বটবৃক্ষের ছায়া আর আপন মায়ের মায়া যেন একই রকম। গরমে আমরা সারা দিন ধরে এখানে বসে তরকারি বিক্রি করি, কিন্তু গরম কী জিনিস তা টের পাইনা। গাছটির বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হবে। কিন্তু আজও এই বটবৃক্ষের একটি শেকড় মাটি স্পর্শ করতে পারেনি। যখনই কোন শিকড় নামতে যায় তখন মানুষ সেটি ছিড়ে ফেলে। গাছটি যেভাবে বেড়ে উঠছে শিকড় মাটিতে না নামলে হয়ত কোন একদিন ঝড়ে উপড়ে যাবে। স্থানীয় আড়তদার কবির হোসেন বাবলু, শামছুল আলম, বিএম আইনাল বলেন, গাছটি মানুষকে ছায়া দিয়ে যেভাবে উপকার করছে তার প্রতিদান হিসেবে তাকে আমরা শুধুই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। মাটিতে এর শেকড় নামা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা বলেন, সম্প্রতি আমি ওই বাজারে গিয়ে গাছটির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে এসেছি।