আপনি মোবাইল ফোনে কথা বলছেন এখান থেকে, আর দেশের অন্য প্রান্তে বা দূরদেশে বসে স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা শুনতে পাচ্ছেন সে কথা! মাথায় কোনো না কোনো সময় নিশ্চয় প্রশ্ন ঘুরেছে, এটা কীভাবে সম্ভব হয়! এর পেছনের প্রযুক্তিটা আসলে কী?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চলুন জেনে নিই কীভাবে মোবাইল ফোন কাজ করে। বা কোন প্রক্রিয়ায় আমরা অন্য প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত হই।
মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলার জন্য কল করলে প্রথমে আমাদের কথা অর্থাৎ ভয়েস মাইক্রোফোনে প্রবেশ করে। ভয়েসকে এবার মাইক্রোফোন একটি ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে নেয়। এটা করতে সাহায্য করে মেমস সেন্সর এবং ফোনে থাকা আইসি।
এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি যে ডিজিটাল সিগন্যাল প্রোগ্রামিং ভাষায় ‘জিরো’ এবং ‘ওয়ান’-এ রূপান্তর হয়। অর্থাৎ আমরা যখন কথা বলছি তা অসংখ্য জিরো এবং ওয়ান তৈরি করছে।
এরপর সেই জিরো এবং ওয়ান চলে যায় মোবাইলের অ্যান্টেনায়। এবার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ সেই জিরো এবং ওয়ানকে একেকটি অক্ষরে রূপান্তর করে। আর অপর প্রান্তে তা পৌঁছায় হ্যালো বা হাই-তে রূপান্তর হয়ে। আর এমন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কাউকে আমাদের ফোনে সংযুক্ত করতে পারে।
কিন্তু ইলেকট্রোম্যাগনেট চাইলেই কী স্বাভাবিকভাবে এত পথ পাড়ি দিতে পারে? না, তা পারে না।
কারণ এর মধ্যে তাকে অসংখ্য বাধার মুখোমুখি হতে হয়। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে উঁচু ভবন, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি বেশ বাধা দেয়।
এ ছাড়া আমাদের পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে যেগুলো ইলেকট্রোম্যাগনেটিককে বাধা দেয়।
আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছি পৃথিবী গোলাকার। পৃথিবী গোলাকার হওয়াতেও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ চলতে বাধা পায়।
কিন্তু বাধা পেলে তো আর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তাই উপায়ও রয়েছে। এসব বাধা পেরিয়ে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ যেন স্বাভাবিক পথ চলতে পারে, সে জন্য তৈরি হয়েছে সেলুলার টেকনোলজি। যাকে আমরা মোবাইল টাওয়ার হিসেবে চিনি। এই প্রযুক্তি পৃথিবীর ভৌগোলিক অঞ্চলকে হেক্সাগোনাল সেলে ভাগ করেছে। সেই সেলের প্রতিটিতে তাদের নিজস্ব টাওয়ার ও ফ্রিকোয়েন্সি স্লট রয়েছে।
এভাবে একটি টাওয়ার আরেকটির সঙ্গে যুক্ত হয়। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, এগুলো অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত। এসব অপটিক্যাল ফাইবার কেবল মাটির নিচ দিয়ে, সমুদ্রের নিচ দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত রয়েছে।
আমরা যখন কোনো কল করি তখন ফোনে যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি করে সেটি চলে যায় কাছের টাওয়ারে। টাওয়ারে যাবার পর তৈরি হয় হাই ফ্রিকোয়েন্সি লাইট পজেস। এবার লাইট পজেসগুলো টাওয়ারের নিচে থাকা বেস ট্রান্সসিভারে চলে যায়। সেখানে সিগন্যালটি প্রসেস হয়। এরপর সেই সিগন্যাল চলে যায় ডেস্টিনেশন টাওয়ারে। ডেস্টিনেশন টাওয়ার সেটি পাঠিয়ে দেয় যাকে কল করা হয়েছে তার ফোনে।
এবার সে প্রান্ত থেকে তার মোবাইলের ইয়ারফোনে ওভেয়টি রিসিভ হয়। আর তিনি কথা শুনতে পান। এভাবেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কল যায়।
কিন্তু বন্ধু তো সব সময় এক স্থানে থাকে না। কখনো সে রাজধানীতে থাকে তো কখনো আবার গ্রামে কিংবা কখনো বিদেশে। তখন আমাকে কীভাবে খুঁজে পায় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ?
এটি খুঁজতেও অনেক কাজ করতে হয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে। অনেক টাওয়ার নিয়ে একটি মোবাইল সুইচিং সেন্টার বা এমএসসি তৈরি হয়। যেখানে অনেক টাওয়ার পরস্পর সংযুক্ত থাকে এমএসসি দিয়ে।
আমরা যখন কোনো সিমকার্ড কিনি তখন সেখানে আমাদের অনেক তথ্য থাকে, যা একটি নির্দিষ্ট এমএসসিতে রেজিস্টার্ড হয়। আর সেটাই হয়ে যায় কোনো ব্যবহারকারীর হোম এমএসসি। সেই হোম এমএসসি সব সময় আমাদের বর্তমান অবস্থান এবং কার্যকলাপ নজরে রাখে।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন আপনার বন্ধু জয়া কল করতে চায় রোহানকে। জয়া যখন রোহানের নম্বরে ডায়াল করে তখন তার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ জয়ার হোম এমএসসিতে চলে যায়। সেখান থেকে সিগন্যাল চলে যায় রোহানের হোম এমএসসিতে। তখন রোহানের এমএসসি রোহানের বর্তমান এমএসসির অবস্থান খুঁজে নেয়। যদি রোহান নিজের এমএসসিতেই থাকে তাহলে কল সরাসরি যায় তার মোবাইলে।
কিন্তু রোহান যদি তার হোম এমএসসিতে না থাকে তখন? তখন রোহানের এমএসসি যোগাযোগ করে রোহানের বর্তমান অবস্থানের এমএসসির সঙ্গে। আর তাকে কানেক্ট করে দেয়। আর তখনই কথা বলা শুরু হয়।
এভাবেই বিশ্বের কয়েক শ কোটি মানুষ প্রতিদিন কয়েক শ কোটি মিনিট-ঘণ্টা ধরে কথা বলে চলেছে দূর-দূরান্ত থেকে।