জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র হাতেই শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে নিরীহ বাঙালিরা।
কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘদিন সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও করতে পারেনি কোনো সরকার। অবহেলা ও অনাহারে দিন কাটিয়েছেন স্বাধীনতাকামী সূর্যসন্তানেরা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা উদ্যোগ নেয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের করা তালিকাতে তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন রকম জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে নেয় মুক্তিযুদ্ধ করেননি এমন ব্যক্তি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মগ্রহণ করা করো কারো নামও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় দেখা যায়।
এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর যাচাই-বাছাইয়ে তালিকা থেকে প্রায় আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১২ জুন জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কমিটির অন্যান্য সদস্যরা, মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী কমিটিকে জানান, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে আট হাজার ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। তারা বিগত দিনগুলোতে যে ভাতা নিয়েছিলেন তা সুদে-আসলে আদায় করা হবে। এ ছাড়া ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রচলিত আইনে মামলা করতে হবে বলে জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) কামরুন নাহার জানান, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মোট ৪৪৬টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মধ্যে ৪৩৬টি নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ১০টির জায়গা না পাওয়ায় নির্মাণ করা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে জমি পাওয়া গেলে সেগুলো নির্মাণ করা হবে বলে তিনি কমিটিকে অবহিত করেন।
টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় তিন শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা আছেন। এক শ্রেণি খুবই বিত্তবান, তাদের এ ভাতা না হলেও চলে। আরেক শ্রেণি হলেন মধ্যবিত্ত, তাদেরও চলে। তৃতীয় যে শ্রেণি আছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমান অবস্থায় সামান্য এ ভাতা দিয়ে জীবন-যাপন করা আসলেই কষ্টকর। তাই সম্মানিভাতা শ্রেণি/ধরন অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে মোজাম্মেল হক সেবা পদ্ধতি সহজীকরণ, মুজিব কর্নার কাম লাইব্রেরি স্থাপন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন— ইত্যাদি প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।