পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ঈদের ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটকরা। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ভূমি খ্যাত সাগরকন্যা কুয়াকাটায় সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই ভ্রমণে আসেন দেশি -বিদেশি পর্যটক। এবারের ঈদে নেই আশানুরূপ পর্যটকের আনাগোনা। তবে তুলনামূলক বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী ১৯-২০ জুন প্রায় ৫০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং থাকলেও ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন কোনো অগ্রিম বুকিং নেই। বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রায় ২৫ শতাংশ বুকিং রয়েছে বলে হোটেল মোটেল এমপ্লয়িজ সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ঈদ পরবর্তী কুয়াকাটায় বাড়তি পর্যটকের সমাগম বাড়বে। এর জন্য সি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। তবে বাড়তি পর্যটকের আনাগোনা না থাকলেও নিরাপত্তাদানে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশসহ দায়িত্বরত সকলেই তৎপর রয়েছেন।
প্রতি বছর ঈদে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবারের ঈদে পার্শবর্তী জেলা থেকে আগত পর্যটকের সংখ্যাই বেশি। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কিছু সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা দেখা গেছে। আগত পর্যটকদের বেশিরভাগই সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টে আনন্দ উপভোগ করছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে তেমন দর্শনার্থীদের বিচরণ করতে দেখা যায়নি।
অপরদিকে খাবার হোটেলগুলোতেও কর্মব্যস্ত দেখা যায়নি ব্যবসায়ীদের। একইভাবে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সেবা দেওয়া ১৮টি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে দেখা গেছে হতাশার ছাপ।
কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যটকদের সেবা দানে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। ব্যবসায়ীদের আশা ছিল ঈদের প্রথম দিন থেকেই পর্যটকের ব্যাপক সমাগম ঘটবে।
সরেজমিন ফিসফ্রাই ও বারবিকিউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. জামালের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
তিনি বলেন, এর আগের বছর এই দিনে বেশ বেচা বিক্রি হয়েছিল। এ বছর মনে হয় ২-৩ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে। তবে আগামী দুইদিন পর পর্যটকের ব্যাপক আগমন ঘটবে। তখন হয়ত ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একই কথা জানান সৈকতের আচার ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সারাদিনে দুই হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে টিকে থাকতে অনেক কষ্ট হবে।
অপরদিকে সৈকতের চটপটি-ফুচকা বিক্রেতা শহিদুল জানান, গতকাল থেকে কোনো বেচা বিক্রি হয়নি। আজ মাত্র অল্প কিছু টাকা বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আগামী দু-এক দিন পরে আমাদের সকলের মুখে হাসি ফুটবে।
কুয়াকাটা সি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির আহ্বায়ক ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ঈদের প্রথম দিন পর্যটকের উপস্থিতি কিছুটা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, মুসলমানদের বড় উৎসব দুটি ঈদ। এর মধ্যে ঈদুল আজহা একটি। তাই পরিবারের সবাই একসাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। আগামী দিন থেকে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে যেহেতু কুয়াকাটায় বাড়তি পর্যটক আসবেন সে লক্ষ্যে আমরা সার্বিকভাবে একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আগে থেকেই বাড়তি নিরাপত্তা দানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এছাড়াও কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা না ঘটে। আমরা প্রতি বছরের থেকে এ বছর বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।