মিনাতে অবস্থানের পর দলে দলে আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হজযাত্রীরা। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর কেউ হেঁটে, কেউ বাহনে চড়ে মিনায় জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে একদিন অবস্থানের শুক্রবার সূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা।
হজের নিয়ম অনুযায়ী জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন হজযাত্রীরা। এরপর সেখানে অবস্থান করেন তারা।
এবার হজের খুতবা দেবেন শেখ মাহের। তিনি আরাফাতের মসজিদ আল নামিরাহ হাজিদের উদ্দেশ্যে কথা বলবেন তিনি। এছাড়া এই মসজিদ থেকে যোহর এবং আসরের নামাজের ইমামতিও করবেন তিনি। দুই পবিত্র মসজিদ বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ জানিয়েছে হজের খতিব শেখ মাহের ইতিমধ্যে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে গেছেন।
এরপর সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন এবং সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন। ওই সময় প্রতীকি শয়তানকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করার জন্য তারা নুড়ি পাথরও সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় হজযাত্রীরা খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করবেন। এরপর ফজর নামাজ পড়ে তারা আবারও চলে যাবেন তাঁবুর শহর মিনায়।
শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে হজ করে গেছেন এখনো ঠিক সেই একইভাবে হজ পালিত হয়ে থাকে। যদিও আগে হজ পালন কষ্টকর হলেও এখন প্রযুক্তির সহায়তায় তা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরাফাতের ময়দান থেকে নিজের জীবনের শেষ ভাষণটি দিয়েছেন। ইসলামের আলোতে আলোকিত হয়ে কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে সেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি। এ কারণে আরাফাতের ময়দান মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মানুষ এবার হজে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে হজে গেছেন ৮২ হাজার ৭৭২ জন। হজের প্রথম দিন পুরুষ হাজীরা সেলাই ছাড়া ইহরাম বা সাদা কাপড় পরেন। অপরদিকে নারী হাজীরা ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। এদিন আরও কিছু নিয়ম নীতি মানতে হয়। যেমন কারও সঙ্গে রাগারাগি না করা এবং যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়া।
ইহরাম বাধার পর দলে দলে হাজিরা মিনায় যান। বেশিরভাগ মানুষ বাসে ও গাড়িতে গেলেও কেউ কেউ হেঁটেও মিনায় যান। এটি ৮ কিলোমিটারের একটি পথ। হজের অংশ হিসেবে ৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন থাকবেন হাজিরা। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। সন্ধ্যার পর মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা করবেন। সেখানে রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন।
১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। এরপর বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে স্বাভাবিক পোশাকে মক্কায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে মিনায় ফিরে গিয়ে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান এবং প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ প্রতিবারের মতো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।