এই প্রশ্নে এখনও নানা আলোচনা বা বিতর্ক রয়েছে।
ভারতবর্ষে সেই ১৯৪৭ সালে জওহরলাল নেহেরু, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং সরদার ভল্লভভাই প্যাটেল সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব একজাতির দেশ দাবি করেছিলেন।
তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তখন বলেছিলেন, “হিন্দু মুসলিমদের একই জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত করা একটা স্বপ্নমাত্র।”
মি: জিন্নাহ তখন দ্বিজাতি তত্ত্ব দিয়েছিলেন। এর আগে ১৯৪০ সালে তিনি লাহোরে এক বক্তৃতায় ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন।
জাতি নিয়ে সমস্যার মীমাংসা না হওয়ার বিষয়টি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের বড় কারণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ব্রিটিশ শাসকেরা আগে থেকেই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারতের বিভাজন চেয়েছিল।
“দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষে তখনকার প্রধান দু’টি দল কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ জাতি সমস্যার সমাধান করতে চায়নি বা তাদের দৃষ্টিতে এটা ছিল না”।
এই দু’টি বিষয়কে বিভাজনের বড় কারণ হিসাবে দেখেন অধ্যাপক চৌধুরী।
তিনি বলেন, “এক জাতির দেশ দাবি করার ভেতরেই লুকিয়ে ছিল ১৯৪৭ এর ধর্মভিত্তিক বিভাজনের বীজ।”
জাতি সমস্যা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সে সময় ভারতে ভাষাভিত্তিক ১৭টি জাতি ছিল।
“কিন্তু কংগ্রেস ভারতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে এক জাতি বলেছে। আর মুসলিম লীগ বলেছে দুই জাতি” বলেন অধ্যাপক চৌধুরী।
তিনি মনে করেন, জাতি সমস্যার মীমাংসা করতে না পারার পেছনে বড় কারণ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এক করে ফেলা হয়েছিল।
“হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুসলিম সম্প্রদায়-তারা দু’টো সম্প্রদায়, তারা কিন্তু দু’টো জাতি নয়”।
কিন্তু কংগ্রেস প্রথমে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে মনে করলো যে, ভারতবর্ষে একটাই জাতি আছে। তখন প্রশ্ন উঠলো এর ঐক্য নিয়ে।
“মুসলিমরাও বললো, আমরাও একটা বড় সম্প্রদায় এবং আমরাও একটা জাতি” বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
অধ্যাপক চৌধুরী মনে করেন, ধর্মের ভিত্তিতে জাতির সংজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক থেকে প্রধান ভূমিকা ছিল কংগ্র্রেসের ভেতরে থাকা হিন্দু মহাসভাপন্থীদের।
“মুসলিম লীগ মুসলমানদের জন্য একটা স্বতন্ত্র আবাসভূমি চেয়েছিল। তারা তখন প্রথমে দেশভাগ চায়নি।”
অধ্যাপক চৌধুরী আরও বলেন, “বিশেষ করে বাংলা এবং পাঞ্জাবে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি এবং এই দু’টি প্রদেশে মুসলিম লীগের সরকার গঠন করতে হবে।
“বাংলায়তো মুসলিম লীগের সরকার এসেই গিয়েছিল। এটা কংগ্রেসের ভেতরের হিন্দু মহাসভা মেনে নিতে পারে নি।
“ফলে কংগ্রেসের আগ্রহ বেশি ছিল ধর্মের ভিত্তিতে ভাগের ব্যাপারে। তখন মুসলিম লীগও দেখেছে, তাতে তাদেরও ক্ষতি নেই।”
ধর্মের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তানের ভাগের পেছনে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ছিল বলেও মনে করেন অধ্যাপক চৌধুরী।
তিনি বলেন, “কংগ্রেসে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ছিল। মুসলিম লীগে উঠতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরাও তাদের স্বার্থে তারাও চাচ্ছিল না যে ভারত একসাথে থাকুক।”