সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের ঐতিহ্য শতবর্ষী নৌকার হাট।
‘বর্ষায় নাও, শুকনায় পাও’। অর্থাৎ বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া গতি নেই। শুকনায় পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। পথঘাট, সেতু হয়ে হাওর অঞ্চলের যোগাযোগের পুরনো ছবিটা অনেকটা পাল্টে গেলেও নৌকার ঐতিহ্য পাল্টায়নি। এখনো হাওরাঞ্চলে নৌকার কদর আগের মতই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্ষাকালে চলাচলে এখনো নানা ধরনের নৌযানই প্রধান বাহন।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরে এখন চারদিকে থইথই পানি। এ কারণে জমে উঠেছে জগন্নাথপুর উপজেলার শতবর্ষী নৌকার হাট। বৃহত্তর হাওর অঞ্চলের মতোই এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ নৌকা। হাওর অঞ্চলের সুপরিচিত এ নৌকার হাটকে স্থানীয়রা নাও হাট বলে থাকে। এখানে ওঠা নৌকার মধ্যে রয়েছে খিলুয়া, কুশি, সরঙ্গা, চাচতলী, চডানাউ, বারকিসহ নানা ধরনের ছোট-বড় নৌযান। বর্ষাকালে এই নৌকা দিয়ে হাওরের মানুষের মাছ ধরা, গরুর খাবার সংগ্রহ, যাত্রী পরিবহন করাসহ নানা কাজ। বিয়ে পার্বণেও প্রয়োজন হয় প্রচুর নৌকার। আর সে জন্য সবার গন্তব্য জগন্নাথপুরের নৌকার হাট। এরই অংশ হিসেবে গতকাল হাটে নৌকা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ব্যাপক সমাগম হয়। এতে হাট জমজমাট হয়ে উঠে। হাটে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরণের নৌকা সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা নৌকায় উঠে তা পছন্দ করেন। পছন্দ হলে দামদর শুরু হয়। পরে চলে বেচাকেনা। উপজেলার হাওর পাড়ের মানুষের নৌকাই একমাত্র ভরসা। বর্ষায় নৌকা ছাড়া তারা চলাচলসহ কোনো কাজ করতে পারেন না।
ইজারাদারের কথা অনুযায়ী, প্রতিবছর এই হাটে জগন্নাথপুর উপজেলা জগন্নাথপুর পৌর এলাকার সুইস গেট নামক স্হানে বসে নৌকার হাট। উপজেলার আশার কান্দি ইউনিয়ন, রানীগন্জ ইউনিয়ন, চিলাউড়া ইউনিয়ন, সহ দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে নৌকা কিনতে। হাটে নৌকা আসে জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে। সেখানকার কারিগররা এসব নৌকা তৈরি করেন। সবচেয়ে বেশি নৌকা সরবরাহ করেন গ্রামের কারিগররা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসে ‘কুশি’ নৌকা, ‘বারকী’ নৌকা। আকারভেদে মাছ ধরার ছোট নৌকা পাঁচ-সাত হাজার টাকা থেকে ২০/৩০হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নৌকা কিনতে হাটে আসা ক্রেতাদের মধ্যে অনেকে জানান, এবার তুলনামূলক নৌকার দাম অনেক বেশি। তবুও অনেকটা বাধ্য হয়ে নৌকা কিনতে হাটে এসেছি। খেয়াজ আলী, ইউনুস মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, খছরু মিয়া জাহাঙ্গীর মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান, ১২ হাত থেকে ১৪ হাত লম্বা নৌকার মূল্য সাড়ে ৯ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতে সব নৌকা সমান নয়। নতুন ও পুরাতন নৌকাও আছে। নৌকা অনুপাতে দাম রয়েছে।